কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ

সুন্দরবনের ক্ষতি নিরুপনে ৬ টিমে কাজ শুরু

সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্রের অবস্থা দ্বিতীয় দিনের মতো সরেজমিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ দল।
বুধবার সকালে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এলাকায় বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এমিলিয়া ওয়ালস্ট্রম সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন তাদের কর্মপরিকল্পনার কথা।
সংবাদ সম্মেলনে গত দুদিনের কর্মকাণ্ড আর আগামী পাঁচদিনের কর্মপরিকল্পনা সর্ম্পকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে।
এমিলিয়া ওয়ালস্ট্রম জানান, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যসহ শ্যালা নদী থেকে হরিণটানা খাল পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা পর্যবেক্ষণ শুরু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা ৬টি দলে ভাগ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে শ্যালা নদীসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পানি, নদীর তলদেশের মাটি, ফার্নেস অয়েল লেগে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস, গাছপালাসহ জীব-বৈচিত্র্যের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কোন বিষয়গুলো সামনে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে তা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শ্যালা নদীতে তেল বিপর্যয়ের পরে ফার্নেস অয়েলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে? সুন্দরবনের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে? এর স্থায়িত্ব কত? জলজসহ প্রাণীকুলের কোনো ক্ষতি হতে পারে কীনা, হলে কী ধরনের তা জানতেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মৎস্য ও বনজীবী ও বন সন্নিহিত লোকালয়ের মানুষের জীবন-জীবীকার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশেষজ্ঞ দলটি গেল ২২ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করবে। পরে ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষণের ফলাফল একত্র করে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর ৩১ ডিসেম্বর সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ টিম। এরপরে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে।

তবে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ টিম কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করলেও স্থানীয় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

Sundarban সুন্দরবনের ক্ষতি নিরুপনে ৬ টিমে কাজ শুরুপরে ৪টি স্পিডবোট আর ২টি ছোট লঞ্চে করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ শুরু করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যসহ শ্যালা নদী থেকে হরিণটানা খাল পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন।

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ৭টি দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ২৫ সদস্যের এ দলটি সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবিতে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল নিঃসরণে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এমিলিয়া ওয়ালস্ট্রম ইউএনডিপি কান্ট্রি অফিসের মাধ্যমে এসব তথ্য জানাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন বন বিভাগের ডিএফও আমীর হোসাইন চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শ্যালা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় তেলবাহী ট্যাংকার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ডুবে যায়। ট্যাংকারটিতে এসময় সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল ছিল।

ডুবে যাওয়ার পর সুন্দরবনের পূর্বাংশের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে। তেলের প্রভাবে ইরাবতি ডলফিন, ভোঁদর, কুমির, গুঁইসাপ, সাপ, নানা প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ এই বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে। তারা সুন্দরবন এলাকায় ৬ দিন অবস্থান করবে।

এ সময় তারা তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের কী ধরনের ক্ষতি হলো, তা মোকাবিলায় কী করা যেতে পারে তা নির্ধারণ করবে।



মন্তব্য চালু নেই