সুজন হত্যা : ওসি সালাউদ্দিন বাদ, এসআই জাহিদ অভিযুক্ত

এসআই জাহিদের নির্যাতনে মিরপুরের ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ১০ জনের মধ্যে ওসি সালাউদ্দিনসহ ৫ জনকে বাদ দিয়ে এসআই জাহিদসহ বাকি ৫ জনকে অভিযুক্ত করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।

সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) বিকাশ কুমার সাহা তদন্ত রিপোর্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হকের আদালতে জমা দিয়েছেন। আর ঘটনাটি তদন্তের জন্য মহানগর হাকিম আশিকুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ৬ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিরপুর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে এসআই জাহিদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তারা হলেন এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজকুমার, কনস্টেবল আসাদ, রাশেদুল ও মিথুন। আর যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন ওসি সালাউদ্দিন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও পলাশ।

থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনকে হত্যার অভিযোগে, তার স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে গত ২০ জুলাই মামলা করেন।

বাদী মামলায় বলেন, গত ১৩ জুলাই রাত অনুমান সোয়া ১২টার দিকে সুজনের ভাড়া বাসায় বাড়ির মালিকের ছেলে (নাম জানা নেই) কলিং বেল বাজিয়ে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে কথা বলব, দরজা খোলেন।’ দরজা খুলে বাদী (লুসি) দেখতে পান বাড়িওয়ালার ছেলে ও এসআই জাহিদ, এএসআই রাজকুমার, কনস্টেবল আসাদ ও রাশেদুল দাঁড়ানো। তারা ভেতরে ঢুকে জানান, সুজনের বিরুদ্ধে মামলা আছে। বাড়ি তল্লাশি করতে হবে। এসআই জাহিদ এ সময় পকেট থেকে পিস্তল ও গুলি বের করে খাটের ওপর রেখে বলেন, এই অস্ত্র দিয়ে অস্ত্র মামলা দায়ের করা হবে। সুজন এ সময় ভয়ে সানশেডে লুকিয়ে ছিলেন। পুলিশ তাকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসে। এরপর গোসলখানায় নিয়ে বালতির মধ্যে তার মাথা ঢুকিয়ে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। এসআই জাহিদ এ সময় দুই লাখ টাকা দাবি করেন। ওই রাতে এত টাকা কোথায় পাবেন- বাদী এ কথা বললে সুজনকে মেঝেতে ফেলে নির্যাতন করা হয়। পরে পুলিশ তাকে মিরপুর থানায় নিয়ে যায়। আলমারি খুলে ২০ হাজার টাকা, সোনার গহনা (যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা) পুলিশ জোর করে নিয়ে যায়।

থানায়ও নির্যাতন : বাদী তার শিশুপুত্রকে নিয়ে গভীর রাতে থানায় যান। সেখানে তিনি দেখেন, এসআই জাহিদ ওয়্যারলেসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন। জাহিদ ওই কর্মকর্তাকে বলছিলেন, “স্যার, হারামজাদাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে এসেছি। এখন কী করব।’ অন্য প্রান্ত থেকে উত্তর আসে, ‘ক্লোজ করে দাও, না হয় ফাইনাল করে দাও।” মিরপুর থানার একটি কক্ষে বাদী ও তার শিশুপুত্রকে আটকে রাখেন এসআই জাহিদ ও অন্যরা। সুজনকে আলাদা একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার ওপর নির্যাতন করা হয়। সুজন এ সময় চিৎকার করছিলেন। একসময় চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ই সুজন মারা গেছেন বলে বাদীর ধারণা।

এ ব্যাপারে বাদীর আইনজীবী ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাহমিদা আক্তার জানান, দীর্ঘ দিন তদন্ত শেষে বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। এখনো তাদের আন্ষ্ঠুানিকভাবে জানানো হয়নি। তিনি জানতে পেরেছেন, ওসি সালাউদ্দিনসহ পাঁচজনকে প্রতিবেদন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ওসি সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আবারও আবেদন করবেন তিনি। তবে সব কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর বাদীর সঙ্গে পরামর্শ করেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। আর এসআই জাহিদসহ পাঁচজন দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বাদীসহ খুশি হয়েছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই