‘সুইপার কেন চিকিৎসক?’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক সেজে এক যুবক একজন রোগীর চিকিৎসা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ওই রোগী মারা গেলে তাঁর স্বজন ও অন্য রোগীর স্বজনেরা ওই যুবককে পিটুনি দিয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পিটুনির শিকার যুবকের নাম সুমন (২৭)। খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্বরত পুলিশ ও শাহবাগ থানার পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে যান। এ সময় বাইরে রোগীর স্বজনেরা বিক্ষোভ করে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘সুইপার কেন চিকিৎসক, জবাব চাই, দিতে হবে’।

মারা যাওয়া রোগীর নাম বিপ্লব মণ্ডল (২৬)। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। তাঁর বাবা বিনোদ মণ্ডল কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, গত রোববার কেরানীগঞ্জে তাঁর ছেলে বিপ্লব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আজ সাড়ে চারটার দিকে বিপ্লব অসুস্থবোধ করলে তাঁরা দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে ইনজেকশনের নাম লিখে দিয়ে তা দ্রুত কিনে আনতে বলেন। বিনোদ অভিযোগ করেন, তাঁরা ইনজেকশন কিনতে যাওয়ার সময় সুমন নামের এক যুবক এসে বিপ্লবের মুখে অক্সিজেনের মুখোশ চেপে ধরেন। একটু পর সুমন নিজ থেকেই বলেন, রোগী মারা গেছেন।

বিনোদ মণ্ডল অভিযোগ করেন, সুমনের গলায় চিকিৎসকের স্টেথেসকোপ ছিল। প্রথমে তাঁরা সুমনকে চিকিৎসক মনে করেছিলেন। কিন্তু পরে ভালো করে দেখেন, ওই যুবক ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও মেঝে ঝাড়ু দিয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, তখন বিপ্লবের স্বজনেরা ওই যুবককে ধরে পিটুনি দিতে থাকেন। খবর পেয়ে সেখানকার দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা গিয়ে সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যান। ততক্ষণে খবর পেয়ে হাসপাতালের সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির হয় শাহবাগ থানার পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে সুমনকে ওঠানো হয়। তখন হাসপাতালের সামনে দু শ থেকে আড়াই শ মানুষ জড়ো হয়। রোগীর মৃত্যুর খবরের কথা জানতে পেরে উপস্থিত লোকজনও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উপস্থিত লোকজন পুলিশি বাধা এড়িয়ে ওই যুবককে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবারও পিটুনি দিতে থাকে। তখন অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাব গিয়ে মারধরকারীদের সরিয়ে দেয়। তারা সুমনকে উদ্ধার করে পুলিশ ক্যাম্পের ভেতর নিয়ে যায়।

জানতে চাইলে হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়ক সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। তবে অহেতুক ঝামেলা এড়াতে হাসপাতালের সামনে র‍্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

জানতে চাইলে সুমন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চার–পাঁচ মাস ধরে ঢাকা মেডিকেলের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বয় হিসেবে চাকরি করছেন। এক ওয়ার্ডমাস্টারের মাধ্যমে তিনি এ চাকরি পেয়েছেন। এক চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ওই রোগীর (বিপ্লব) কাছে গিয়েছেন।

এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই