সীমান্ত চুক্তিতে মানবিক সমস্যার সমাধান হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ায় ছিলমহলবাসীর মানবিক সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ (বাজেট) অধিবেশনে সাংসদ এস এম মোস্তফা রশিদীর প্রশ্নের জবাবে সংসদকে এ তথ্য জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতীয় ১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর। আর ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর। স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুযায়ী এই ছিটমহলগুলো যেটি যে দেশে অবস্থিত সেটি সে দেশেরই হবে। এই বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ ১০ হাজার ৫০ একর জমি বেশি পাবে।

এ বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এখন তারা (ছিটবাসী) নিজ দেশের ভোটার হওয়া থেকে শুরু করে জমিজমা ক্রয়-বিক্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাসহ সংবিধানবর্ণিত সব মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন। আর সরকার এখন ওইসব এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এস এম মোস্তফা রশিদীর আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নতুন মাত্রা এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলেই এ বিল পাস এবং এর সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত-সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর গুরুত্ব ও গভীরতা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সীমান্তসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানকল্পে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়- যা স্থলসীমানা চুক্তি ১৯৭৪ (মুজিব-ইন্দিরা) হিসেবে বিবেচিত। একই বছরের ২৮ মে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে চুক্তিটি অনুমোদিত হয় এবং আইন হিসেবে পাস হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করি। চুক্তিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১০-১১ সালে টেকনিক্যাল পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে ২০১১ সালে একটি প্রটোকল প্রণীত হয়। এরপর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে প্রটোকলটি দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ৭ মে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় ১১ মে ভারতের সংবিধান সংশোধন বিল (১০০তম) সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।’

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে অনুসমর্থন উপকরণ বিনিময় হয়। আর এর মধ্য দিয়েই দুই দেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালের স্থলসীমানা চুক্তি এবং এর প্রটোকলটি কার্যকর করা সম্ভব হয়। ফলে ৬৮ বছর পর এ সমস্যার সমাধান হলো।

শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে ছয়টি চুক্তি, ছয়টি প্রটোকল ও অন্যান্য এবং ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমানে নতুন মাত্রা লাভ করেছে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, সরকারি এবং সাধারণ জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব দ্বিপক্ষীয় সমস্যা রয়েছে, সেগুলোও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ সময় উভয় দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো গভীর এবং জোরদার হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।



মন্তব্য চালু নেই