সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডুতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ১৫টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পর পার্শ্ববর্তী বুচিদং জেলায় অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী।

প্রাণে বাঁচতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

মংডুতে মুসলিম গণহত্যা ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের পর সম্ভ্রম ও প্রাণ বাঁচাতে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।

টেকনাফের লেদা ও উখিয়ার অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং আশপাশের পাহাড়ি কিংবা সমতল এলাকার বাসাবাড়িতে মানবিক আশ্রয় পেয়েছে এসব ভাগ্য বিড়ম্বিতরা।

তবে মানবিকতার পরিবর্তে উভয়পারের মানবপাচারকারী ও ইয়াবা সিন্ডিকেট নির্যাতিতদের শেষ সম্বল ছিনিয়ে নিয়ে সীমান্ত পারে সহযোগিতা করছে। তারাই দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে।

জলসীমায় কড়াকড়ি আরোপের পর এখন টেকনাফের চেয়ে উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পথ দিয়ে বেশী সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ হচ্ছে।

অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি টহল জোরদার করে অনুপ্রবেশকারীদের আটক ও ফেরত পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। রোববারও রোহিঙ্গা বোঝাই ছয়টি নৌকা এবং সীমান্তে আটক পাঁচজনকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা শরণার্থী শিবির ও উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার ভোরে আড়াই শতাধিক মানুষ বাংলাদেশে ঢুকেছে।

গত শুক্রবার সীমান্ত এলাকার চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছিলেন, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে।

অভিযোগ উঠেছে তুমব্রুর স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল গফুর সীমান্ত অতিক্রম হওয়া অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে আদায় করছেন। তার নিয়ন্ত্রিত একটি চক্র টাকাটি আদায় করে নিচ্ছেন। তবে গফুর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মিয়ানমারের পোয়াখালী থেকে আসা জাফর আলম, আবুল হোসেন, মিরামত রোববার দুপুরে জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিপি গণহারে মুসলিম নিধন করছে। বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রকাশ্যে গুলি করে পাখিরা মতো রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে।

তাদের দাবি, ছোট ছোট শিশুদের জবাই এবং মহিলাদের গণহারে ধর্ষণ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে গুটিকয়েক রোহিঙ্গাই পালিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির কড়া নিরাপত্তার কথা প্রচার পাওয়ার পর নির্যাতিত অনেকেই বাধ্য হয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর কথা ভাবছেন। তাদের অনেকেই নৌকায় নাফ নদীতেই ভাসছেন।

টেকনাফের লেদা শরণার্থী শিবিরের সভাপতি দুদু মিয়া বলেন, মংডু এলাকায় অভিযানের পাশাপাশি সেনাবাহিনী বুচিদংয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে সেখানে বসবাসরত আত্মীরা জানিয়েছেন। বুচিদং এলাকায় দুদু মিয়ার দুই চাচা ও অন্য আত্মীয়রা রয়েছেন।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উখিয়া সীমান্তের জন্য নতুন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক ঘটনার পর তা একটু বেড়েছে।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, মিয়ানমারের সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সীমান্তে টহল জোরদার রয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তিনি জানান, রোববারও উখিয়ার পার্শ্ববর্তী ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা তিনজন পুরুষ ও দুইটি শিশুকে একই সীমান্ত দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

এ নিয়ে গত ২৭ দিনে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি অনুপ্রবেশের সময় ৪১৬ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বলে জানান এই বিজিবি কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের পর মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশে আসছিল রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ রাখাইনের সেনা অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছে।



মন্তব্য চালু নেই