লালমনিরহাট: আগামী ১৫ নভেম্বর শীতকালীন অধিবেশনে ভারতীয় লোকসভায় ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি সংক্রান্ত বিল পাসে কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২ টায় ভারতের কোচবিহার জেলার নয়ারহাট থানার বসকোটাল সীমান্ত এলাকায় আয়োজিত এক জনসভায় এ আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ তথ্য উল্লেখ্য করে ভারতীয় ছিটমহলের সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, কুচবিহারের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ছিটমহল বিনিময় চুক্তিতে তার কোনো বাধা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্র সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
দীপ্তিমান আরো জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতার এ ঘোষণার পরে ছিটমহলগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খবরটি নিশ্চিত করে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক বলেন, ‘দেরিতে হলেও ভারতীয় লোকসভায় ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিল উঠার খবরে ছিটমহলবাসীরা আশায় বুক বাঁধছেন।’
ছিটমহলবাসীর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে মইনুল হক আরো বলেন, ‘এবার হয়ত দীর্ঘদিনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি মিলবে তাদের। ১৯৪৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১ আর ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মানুষ অবর্ণনীয় দুংখ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। বন্দিদশা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে দাবি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখে অসহায় ছিটমহলবাসীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৫ নভেম্বর শীতকালীন অধিবেশনই ভারতীয় লোকসভায় ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি সংক্রান্ত বিল উঠতে যাচ্ছে। আর এখবরে উত্তরের ৬১টিতে আনন্দ র্যালিসহ দুদেশের ১৬২ ছিটমহল ভাসছে খুশির জোয়ারে।’
লালমনিরহাট সদরের কুলাঘাট ইউনিয়নের ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলের অধিবাসী মফিদার রহমান (৫০), আলী মিয়া (৫০) বাংলামেইলকে জানান, আমরা যুগ যুগ ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারি না। এবারে শোনা যাচ্ছে ভারতের বর্তমান সরকার শীতকালীন অধিবেশনে ছিটমহল বিনিময় বিল পাস কবরে। একথা জানার পর আমরা আশাবাদি। এবার হয়তো বন্দিদশা থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক আরো বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশভাগ, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণের বেড়াজালে পড়ে সৃষ্টি হয় ছিটমহলের। ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পায় না কোনো নাগরিক সুবিধা। তবে দীর্ঘ অপেক্ষা আর আন্দোলন সংগ্রামের ফল হয়তবা এবারে ভোগ করতে পারবে ছিটমহলের অসহায় মানুষ।’
তিনি ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিল আগামী ১৫ নভেম্বর ভারতীয় সংসদে উঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের সরকারকে সাধুবাদ জানান। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ভারতের লোকসভায় ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিষযটি সুরাহা হবে এ প্রত্যাশা ছিটমহলের লাখো মানুষের।
মন্তব্য চালু নেই