মমতার ঘোষণায় ১৬২ ছিটমহলে আনন্দ

সীমান্তে সম্প্রীতির বার্তা দিলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ছিটমহল হস্তান্তর নিয়ে কোনো আপত্তি নেই রাজ্যের। ছিটমহলের বাসিন্দাদের দাবি কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই চুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।’

বৃহস্পতিবার কোচবিহারের ডাকুর হাটের জনসভায় এ সম্প্রীতির বার্তা দেন মমতা। কোচবিহারের যে প্রত্যন্ত এলাকায় মমতার এ জনসভাটি অনুষ্ঠিত হলো তার মোটামুটি দেড়শ মিটারের মধ্যেই বাংলাদেশি ছিটমহল করলার অবস্থান।

ছিটমহল ইস্যু নিয়ে মমতার এ অবস্থান পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা এ সমস্যার সমাধান হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

এরআগে ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার কোচবিহারের জনসভায় নিজের অবস্থান পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।

বুধবার প্রকাশিত আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ছিটমহল বিনিময়ে সব আপত্তি তুলে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়েও দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র।

এরআগে লোকসভা নির্বাচনের আগে ওই কোচবিহারের একটি জনসভাতেই মমতা ছিটমহল ইস্যুতে প্রথম তার অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি চান বাসিন্দাদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেই ছিটমহল বিনিময় হোক।

কলকাতার একটি সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে বৃহস্পতিবারের জনসভায় মমতা বলেন, ‘ধর্মবিভেদ কখনও কাম্য নয়। রবীন্দ্র-নজরুলকে আলাদা করা যায় না। হিন্দু মানেই মুসলিমের বিরোধিতা করতে হবে, এমনটা নয়। আমরা সবাই একই জাতির অংশ। আমাদের এক হয়ে থাকতে হবে।’

গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থল সীমান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদিত হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি সুগত বসু ও মুমতাজ সংঘমিতা এত দিন বিরোধিতা করে এলেও এই বৈঠকে চুক্তির পক্ষেই সায় দেন। গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে বিনা বাধায় রিপোর্টটি উত্থাপিত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই অবস্থান পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল সংসদে পাশ হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা।’

ছিটমহল বিনিময় হলে কত সংখ্যক পরিবার ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান সে বিষয়ে একটি পরিসংখ্যানও রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির। কমিটির সমন্বয়ক বলছেন, ‘বর্তমানে ভারতীয় ছিটমহলের ১৪৯টি পরিবারের ৭৩৪ জন বাসিন্দা ঠিকানা বদলে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে চান।’

মমতার ঘোষণায় ১৬২ ছিটমহলে আনন্দ:

borders-peoplefinal মমতার ঘোষণায় ১৬২ ছিটমহলে আনন্দলালমনিরহাট: আগামী ১৫ নভেম্বর শীতকালীন অধিবেশনে ভারতীয় লোকসভায় ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি সংক্রান্ত বিল পাসে কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২ টায় ভারতের কোচবিহার জেলার নয়ারহাট থানার বসকোটাল সীমান্ত এলাকায় আয়োজিত এক জনসভায় এ আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ তথ্য উল্লেখ্য করে ভারতীয় ছিটমহলের সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, কুচবিহারের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ছিটমহল বিনিময় চুক্তিতে তার কোনো বাধা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্র সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

Border-pic মমতার ঘোষণায় ১৬২ ছিটমহলে আনন্দদীপ্তিমান আরো জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতার এ ঘোষণার পরে ছিটমহলগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে খবরটি নিশ্চিত করে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক বলেন, ‘দেরিতে হলেও ভারতীয় লোকসভায় ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিল উঠার খবরে ছিটমহলবাসীরা আশায় বুক বাঁধছেন।’

ছিটমহলবাসীর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে মইনুল হক আরো বলেন, ‘এবার হয়ত দীর্ঘদিনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি মিলবে তাদের। ১৯৪৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১ আর ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মানুষ অবর্ণনীয় দুংখ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। বন্দিদশা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে দাবি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখে অসহায় ছিটমহলবাসীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৫ নভেম্বর শীতকালীন অধিবেশনই ভারতীয় লোকসভায় ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি সংক্রান্ত বিল উঠতে যাচ্ছে। আর এখবরে উত্তরের ৬১টিতে আনন্দ র‌্যালিসহ দুদেশের ১৬২ ছিটমহল ভাসছে খুশির জোয়ারে।’

লালমনিরহাট সদরের কুলাঘাট ইউনিয়নের ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলের অধিবাসী মফিদার রহমান (৫০), আলী মিয়া (৫০) বাংলামেইলকে জানান, আমরা যুগ যুগ ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারি না। এবারে শোনা যাচ্ছে ভারতের বর্তমান সরকার শীতকালীন অধিবেশনে ছিটমহল বিনিময় বিল পাস কবরে। একথা জানার পর আমরা আশাবাদি। এবার হয়তো বন্দিদশা থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে।

Lalmonirhat-Patgram-Photo-04-10-14 মমতার ঘোষণায় ১৬২ ছিটমহলে আনন্দছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক আরো বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশভাগ, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণের বেড়াজালে পড়ে সৃষ্টি হয় ছিটমহলের। ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পায় না কোনো নাগরিক সুবিধা। তবে দীর্ঘ অপেক্ষা আর আন্দোলন সংগ্রামের ফল হয়তবা এবারে ভোগ করতে পারবে ছিটমহলের অসহায় মানুষ।’

তিনি ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিল আগামী ১৫ নভেম্বর ভারতীয় সংসদে উঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের সরকারকে সাধুবাদ জানান। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ভারতের লোকসভায় ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিষযটি সুরাহা হবে এ প্রত্যাশা ছিটমহলের লাখো মানুষের।



মন্তব্য চালু নেই