‘সিমেন্ট ছাড়াই’ স্কুল নির্মাণ, ভাঙা হচ্ছে একাংশ

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের নবীনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

সোমবার সকালে মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার ও গাংনীর উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হকের উপস্থিতিতে ঠিকাদারের শ্রমিকরা ভবনের একটি অংশ ভাঙার কাজ শুরু করেন।

গত ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ওই ভবনটির ত্রুটিপূর্ণ অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন বলে জানান প্রকৌশলী মাহবুবুল হক।

আজ ভবনের একাংশ ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুলশিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকরা সেখানে গিয়ে পুরো ভবন ভেঙে ফেলার দাবি তোলেন। তা না হলে ওই স্কুলে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের পাঠাবেন না বলে জানান।

এর আগে অভিযোগ ওঠে, ইট-বালুর সঙ্গে সামান্য সিমেন্ট দিয়ে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। যে কারণে নির্মাণের মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় গত ৭ জানুয়ারি ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি ভেঙে পড়ে। এতে নির্মাণশ্রমিক মোক্তার আলী আহত হন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ উঠলেও ৭ জানুয়ারি রাতে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে গাংনী থানায় শুধু স্কুলভবন নির্মাণশ্রমিকের প্রধান রফিকুল ইসলামের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

স্কুলটির শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৬৩ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে গত বছরের মে মাসে নবীনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করে তামান্না এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ খালেক ও তাঁর ব্যবসায়িক সহযোগী মোনায়েম হোসেন মুলাক।

ভবন নির্মাণকাজের প্রথম থেকে সিমেন্ট কম দেওয়া, দুর্বল ইট ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়ম করলেও ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা কথা বলার সাহস পাননি। স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক ও শিক্ষক এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে কয়েকজন শ্রমিককে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি তাঁদের কয়েক দিনের পারিশ্রমিকও পরিশোধ করা হয়নি। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁদের সঙ্গে ঠিকাদার পক্ষের লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

নবীনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘স্কুল ভবনের একটা অংশ থাকলেও আমরা নেব না। প্রয়োজনে আমাদের স্কুলের জমি ফাঁকা করে দেওয়া হোক। আমরা সেখানে চাষাবাদ করব, তবু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সন্তানদের পাঠাব না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক নুরুন নাহার শেলী বলেন, ভবনটি পুরো ভেঙে ফেলতে হবে। নতুন করে ভবন তোলা না হলে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না। গত বছর এখানে ১২০ জন শিক্ষার্থী থাকলে এ বছর মাত্র ৭০ জন ভর্তি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুমন আলী বলেন, ‘অনিয়ম করে স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। লোক দেখানোর জন্য ভবনের একটি অংশ ভাঙা হলে আমরা তা মানব না। সম্পূর্ণভাবে ভবনকে ভেঙে ফেলতে হবে।’

মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার বলেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নির্দেশে ওই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। যতটুকু ত্রুটি পাওয়া যাবে ঠিক ততটুকু ভেঙে ফেলা হবে। এমনকি যদি ভবনের নিচ পর্যন্ত ত্রুটি পাওয়া যায় তাহলে পুরো ভবনই ভেঙে ফেলা হবে।



মন্তব্য চালু নেই