সিঙ্গাপুরের নদীর আদলে পাল্টাচ্ছে বুড়িগঙ্গা

বিশ্বব্যাংক ও ডিএসসিসির যৌথ অর্থায়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক প্রকল্পে বিধ্বস্ত বুড়িগঙ্গা নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। মূল অবস্থান ঠিক রেখে সিঙ্গাপুরের কালং ও সিঙ্গাপুর নদী এবং বাংলাদেশের হাতিরঝিলের আদলেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। আগামী সপ্তাহে পরামর্শক সংস্থা এর মূল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করবেন। এরপর শুরু হবে প্রকল্পের বাকি আনুষ্ঠানিকতা।

ডিএনসিসির নগরপরিকল্পনা দপ্তর সূত্র জানায়, মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরে আনতেই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরে আনা হবে। নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে পুরো নদীজুড়ে। অবকাশ যাপনের জন্য নদীর তীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে (চলাচলের রাস্তা), পার্ক, বসার স্থান, নদীঘাট, পর্যটকদের জন্য প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ থাকবে। পর্যটকরা যাতে নদীর প্রাকৃতিক রূপ উপভোগ করতে পারেন সে জন্য নদীর দুই পাশের প্রসস্থ সড়কে উন্নত বাস সার্ভিসও থাকবে, যা রয়েছে হাতিরঝিলে।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরের কালং ও সিঙ্গাপুর নামে দুটি নদী রয়েছে। সেই দুটি নদীর আদলেই বুড়িগঙ্গা রূপান্তরিত করা হবে। সিঙ্গাপুর সরকারের সাজানো ওই দুটি নদীতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায়। সেই নদীর আদলে বুড়িগঙ্গাকে সাজাতে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তারা দুটি নদী মেয়রকে দেখিয়েছেন। মেয়রও প্রতিনিধি দলের উপস্থাপন দেখে সন্তুষ্ট। সে অনুযায়ী এখন চরছে নকশা প্রণয়নের কাজ। বিশ্বব্যাংকের হয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কনসালট্যান্টের কাজ করছে বেঙ্গল ইনস্টিটিউট।

এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, বুড়িগঙ্গাকে নবরূপ দিতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ‘ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পটির মধ্যে থাকবে শিকদার মেডিকেল থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত নদীর পাড়ের আধুনিকায়ন। দু’পাড় ঘেঁষে থাকবে বিশেষ ধরনের সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়ে (চলাচলের রাস্তা)। দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে ছোট ছোট টেবিল। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য থাকবে বিনোদন সুবিধা সংবলিত প্রমোদতরী। সব বয়স ও শ্রেণির মানুষের জন্য থাকবে বিনোদন পার্ক। থাকবে তিন বা পাঁচতারকা মানের কয়েকটি রিসোর্টও।

সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাটের বর্তমান অবস্থান ঠিক রেখে করা হবে আরো আধুনিক। সবুজায়নে ভরে দেয়া হবে পুরো নদী পাড়। কিছু স্থান রাখা হবে খোলামেলা। পাড় ঘেঁষে যেসব প্রাচীন, ঐতিহাসিক, দর্শনীয় ভবন ও স্থান রয়েছে, সেগুলোকে আরও আধুনিকায়ন করা হবে। তিন থেকে চারটি থাকবে ভাসমান রেস্তোরাঁ। পানাহারের সুবিধাসহ বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হবে এসব রেস্তোরাঁয়। নদীর দিকে যেসব ড্রেন বা স্যুয়ারেজের পাইপলাইন রয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা হবে।

বুড়িগঙ্গার পানির মান ঠিক রাখতে কয়েকটি পানি শোধনাগার (রিসাইকেল পন্ড) থাকবে। নদীর দু’পাড়ে থাকবে আধুনিক আলোকসজ্জা। দেশি-বিদেশি ফুল ও অর্নামেন্টাল ট্রি (সাজবৃক্ষ) দিয়ে সাজানো হবে পাড়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের নাজুক চেহারাকে পরিবর্তন করার জন্য উন্নত দেশের নদী বন্দরের কায়দায় বিশেষভাবে ঢেলে সাজানো হবে নৌবন্দরকে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ফিরবে বুড়িগঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহ। প্রকল্পের আওতায় নদীর চেহারাকে আমূল বদলে দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে মোহনীয় এ প্রকল্পের বিষয়ে এরই মধ্যে সংস্থার মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। তারা প্রকল্পে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাকী টাকা ডিএসসিসি তার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ঢাকার ইতিহাস বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায়। এর প্রাণ ফিরে এনে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলোর জন্য আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা একটা পর্যায়ে চলে যেতে পারবো। ফলে বুড়িগঙ্গা হবে রাজধানীর দ্বিতীয় হাতিরঝিল।’

বুড়িগঙ্গা প্রসঙ্গে গত ১৬ মে নগরভবনে মেয়রের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সাঈদ খোকনের প্রধান সমন্বায়ক ও আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘হাতিরঝিলের মতো আমরা আরো একটি হাতিরঝিল করবো। আর বুড়িগঙ্গা নদী হবে সেই হাতিরঝিল। বুড়িগঙ্গাকে আগের স্থানে ফিরে আনতে পারলে আপনাদের (মেয়র ও কাউন্সিলর) নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে।’

এর আগেও বুড়িগঙ্গাকে নতুনপ্রাণ ফিরে দিতে ৯৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম)’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এবার বিভক্ত ঢাকার সিটি নির্বাচনের পর দক্ষিণের নির্বাচিত মেয়র সাঈদ খোকন নতুন করে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছেন। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই