সাভারের বেদে পল্লীতে হয়ে গেল ব্যতিক্রমী এক গণবিয়ের অনুষ্ঠান

টিপু সুলতান (রবিন) : প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর একসাথে তিন নবদম্পতির বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাভারের বেদে পল্লীতে শুরু হলো বাল্য বিয়ে বিরোধী এক নতুন অধ্যায়ের।তিন নবদম্পতির মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই দম্পতির একবছর আগে বিয়ের কথা থাকলেও তৎকালিন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের উদ্দ্যেগে বিয়ে স্থগিত করে তাদের পরিবার।

শুক্রবার সাভারের পোড়াবাড়ি ঈদগা মাঠে আজ তিন দম্পত্তির বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাভার ও ধামরাইয়ের স্থানীয় সাংসদ, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, চলচিত্র অভিনেতা, পৌরমেয়রসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

বিয়ের বয়স না হওয়া সত্ত্বের গত বছর ঈদুল আযহার পর বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছিলেন সাভারের বেদে পল্লীর তিন নবদম্পত্তির দুই দম্পত্তি। তৎকালিন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের পরামর্শে তখন বিয়ে স্থগিত করেন তাদের পরিবার। এক বছর অপেক্ষার পর শুক্রবার দুপুরে সাভারের পোড়াবাড়ি ঈদগাহ মাঠে জমাজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে তিন নব দম্পত্তি লিমা-মিজান, মাসেনা-কাউসার ও মজিরন-সাদ্দামের বিয়ের আয়োজন করে ঢাকা জেলা পুলিশ।

সাভারের পোড়াবাড়ি(বেদে পল্লি) উত্তরণ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে পোড়াবাড়ি ঈদগাঁ মাঠে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। ব্যাতিক্রমী এই বিয়ের আয়োজন দেখতে ওই এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়।

বেদে সম্প্রদায়ের উত্তরণ ফ্যাশনের তিন নারী শ্রমিক মাছেনা (১৯),লিমা খাতুন (১৯) ও মজিরন আক্তারের (১৮) বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পোড়াবাড়ি এলাকার বাবুল মিয়ার মেয়ে মাছেনার সাথে সাপুরে কাওছার (২২) এর,আরকান মিয়ার মেয়ে লিমার সাথে গাড়ির ড্রাইভার সাদ্দাম হোসেন (২২) এর ও ওমরপুর এলাকার মোস্তাকিণ এর মেয়ে মজিরন এর সাথে মুদি ব্যবসায়ী সাদ্দাম মিয়ার (২৩) এক সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। এসময় তাদের বিয়ে পড়ান কাজী মাওলানা আব্দুল হাবিব। বিয়ের পরে পুলিশ ও উত্তরণ ফ্যাশনের উদ্যোগে নব দম্পতিদের উপহার হিসেবে নগদ অর্থ ও আসবাবপত্র দেয়া হয়।

পোড়াবাড়ি সমাজকল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক রমজান আহামেদ জানান, হাবিব স্যার ঢাকা জেলার এসপি থাকা অবস্থাতেই বেদেদের জীবন-মান উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তার হাত ধরেই বদলে গেছে বেদেপল্লী। উত্তরণ নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে এখানে। যেখানে কাজ করছেন অসংখ্য বেদে নারী। নিজেরাই হয়েছেন স্বচ্ছল।

পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজ হাবিবুর রহমান জানান, আমি ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অপরাধ দমনে খোজ নিতে বেদে পল্লীতে যাই। তখন বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনেরা বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। সমাজ স্বীকৃত কোন কাজ করতোনা তারা। বিভিন্ন জায়গায় সাপ খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। গত বছর দুটি মেয়ের বিয়ে হচ্ছিল। বয়স কম থাকায় আমরা বিয়ের পিড়ি থেকে তাদেরকে তুলে নিয়ে গেছি। তাদেরকে বুঝিয়েছি বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে। আজকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর সেই বর এবং সেই কনের সাথেই বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। আগে কাবিন রেজিষ্ট্রি ছাড়াই বেদে সম্প্রদায়ে বিয়ে সম্পন্ন হলেও আজকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী সরকারী আইন মেনে বৈধভাবে বিয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের বিয়েতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের গণ্যমান লোকজন উপস্থিত থাকায় তারা অত্যন্ত আনন্দিত। তারা হয়তো কোনদিন কল্পনাও করেননি তাদের বিয়েতে এতো লোকজন হবে।

আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান, ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, ঢাকা-১৯ আসনের এমপি ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা-২০ আসনের এমপি আব্দুল মালেক, গাজিপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, সাভার মডেল থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহামনসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।



মন্তব্য চালু নেই