সাপ মেরে ঘুমাতে পারছেন না গ্রামবাসী
সাপ নিয়ে যেমন অনেক পৌরাণিক কাহিনী আছে, তেমিন এখনো এটিকে নিয়ে অন্ধ বিশ্বাসও আছে অনেকের মধ্যে। আবার অনেক সিনেমা নাটকেও সাপের বিষয়টি অন্য রকমভাবে দেখানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় সাপকে দেবী হিসেবে মনসাকে পূজা করে থাকেন।
সাপের মধ্যে অলৌকিক ক্ষমতা আছে এমন ধারণা হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের। তবে একটি সাপ মারাকে কেন্দ্র করে অলৌকিকভাবে বারবার আগুন লাগার ঘটনাসহ নানা অঘটন ঘটেছে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার হিজলা গ্রামে। এমনটি দাবি করেছেন ওই গ্রামের আমজনতা।
তাদের ধারণা একটি কালকেউটে (গোখরা) সাপ মারাকে কেন্দ্র করে এখন বিপাকে পড়েছেন। সাপটি মারার পর থেকে অলৌকিকভাবে বাড়িতে-বাড়িতে আগুন লাগছে। এ ঘটনার পর থেকে আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। আগুন লাগার ভয়ে বাড়ির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে লোকজন। আগুন নেভানোর জন্য অনেক বাড়িতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পানি। এ ঘটনায় এলাকায় চরম ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হিজলা গ্রামের সবুর খান জানান, ৮ দিন আগে তার মাছ ধরার জালে একটি কেউটে সাপ ধরা পড়ে। সাপটিকে জালসহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এসময় সাপটিকে মারার জন্য তার শরীরে আঘাত করা হলে ওই বাড়ির এক কিশোরী মাটিতে গড়াতে থাকে এবং সাপের মতো ফণা তুলে সে নাচতে থাকে। এসময় সেটিকে পিটিয়ে মারা হলে কিশোরীটি তার সন্তানকে মারা হয়েছে বলে চিৎকার করতে থাকে। এর জন্য ক্ষমা না চাইলে, কেউ নিস্তার পাবেনা বলেও জানায় সে। এরপর থেকে ওই বাড়িতে শুরু হয় অলৌকিকভাবে আগুন লাগার পালা।
প্রতিদিন বাড়ির যেখানে সেখানে অলৌকিকভাবে আগুন লাগছে। এ আগুনে অনেক গাছপালা ও খড়ের পালা পুড়ে ছাঁই হয়েছে। গত ৮ দিনে ওই গ্রামের সবুর খান, ইউসুফ খান, সেলিম খান, আসাদ আলী, আলমগীর খান, সোহরাব আলী ও দীন খানের বাড়িতে অলৌকিকভাবে ১৪/১৫ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি করেন ওই বাড়ির লোকজন।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ওঝাঁ-বৈদ্যের বাড়িতে চলছে দৌঁড়-ঝাঁপ। এতে ভীতি ও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামবাসীর মধ্যে। পাশাপাশি বিষয়টি ঘিরে জনমনে নানা রহস্যের জন্ম হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত উৎসুক লোকজন খবর পেয়ে ভিড় জমাচ্ছেন ওই গ্রামে। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারী।
একই গ্রামের আসাদ আলী জানান, সাপটি মারার পর থেকে নানা অঘটন ঘটছে। প্রতিদিন একাধিক বার হঠাৎ করে যেখানে-সেখানে আগুন লাগছে। গ্রামবাসী ছুটে এসে আগুন নেভাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকজন চরম আগুন আতঙ্কে আছেন। বাড়ির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আর এর থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ওঝাঁ-বৈদ্যের কাছে ছুটছেন তারা।
হিজলা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আজমীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এটি একটি অলৌকিক ব্যাপার বলে জানতে পেরেছি। একটি সাপ মারাকে কেন্দ্র করে বার বার এ ধরনের আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে।
প্রাণী ও পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান জানান, সাপ মারাকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনার কোনো নজির নেই। এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এটি একটি কাল্পনিক বিষয় মাত্র।
চিতলমারী দারুল উলুুম মাদরাসার অধ্যক্ষ (বড় হুজুুর) মো. আব্দুর রহমান সাহেব জানান, এসব জ্বীনের কারবার বলে মনে হচ্ছে। এ ব্যাপরে তদবির দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাধু বাবা জানান, এটা মা মনসার কাজ। সাপ মেরে ফেলার কারণে মা মনসা ক্ষিপ্ত হয়ে এসব অঘটন ঘটাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনোয়ার পারভেজ জানান, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে এটি কোনো বিশ্বাসযোগ্য বিষয় নয়। এসব আগুন লাগার পেছনে অন্য কি কারণ থাকতে পারে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। তিনি জনগণকে অহেতুক ভীত-বিভ্রান্ত না হবার পরামর্শ দিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই