সাধারণ মানুষের জন্য আইন, আ.লীগের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা!

সাধারণ মানুষ কিংবা ভিন্ন কোনও রাজনৈতিক দলের জন্য কঠোর মনোভাব দেখানো হলেও এবার বিশেষ ব্যবস্থায় খুব সহজেই নগরীতে ব্যানার-পোস্টার লাগানোর অনুমোদন পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ করে পুরো নগরী পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। আর এসব দেখলেও একেবারেই নীরব রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

আগামী শনি ও রবিবার (২২ ও ২৩ অক্টোবর) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর। রাজকীয় আয়োজন চলছে সেখানে। কিন্তু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উদ্যানের বাইরে চলছে নেতাকর্মীদের ব্যানার-পোস্টার লাগানোর প্রতিযোগিতা। অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক কোথাও বাকি নেই, অসংখ্য তোরণ ও ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, তোপখানা রোড, মৎস্যভবন, শাহবাগ, কাকরাইল, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেইট, মহাখালী, গুলশান, বনানী, যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, মিরপুরসহ প্রতিটি এলাকায় সম্মেলন সংশ্লিষ্ট ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়েছে। এমনকি মন্ত্রীপাড়ার ভেতরের সড়ক ও সড়ক দ্বীপেও স্থাপন করা হয়েছে ব্যানার ও নানা ধরনের প্রচারণা বোর্ড। এসব ব্যানার-পোস্টারের কারণে ঢাকা পড়ে গেছে গাছপালা, দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন ফলক, ফুটওভার ব্রিজ ইত্যাদি।

জানা গেছে, সিটি করপোরেশন (ট্যাক্স) বিধিমালা ১৯৮৬-এর ৭৪ ধারা অনুযায়ী বিজ্ঞাপন প্রচারের উদ্দেশ্যে নিজস্ব বা সিটি করপোরেশনের জায়গায় যে কোনও বিলবোর্ড, ব্যানার বা ফেস্টুন জাতীয় স্থাপনা নির্মাণে আবশ্যিকভাবে সিটি করপোরেশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, রাজধানীতে ব্যানার-পোস্টার লাগাতে আওয়ামী লীগকে অফিশিয়ালি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের সময় কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে, যেসব শর্ত অন্যদেরও দেওয়া হয়। তিনি বলেন, শর্ত মেনেই ব্যানার-পোস্টারগুলো লাগানো হচ্ছে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া আছে। এরপর আমরা এগুলো পরিষ্কার করব। বিএনপির সম্মেলন হলে তাদেরকেও অনুমোদন দেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, তারা তো অনুমোদন চায়নি। তবে এর আগে যখন চেয়েছে অনুমোদন পেয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, অনুমোদনপত্রে নগরীর সৌন্দর্যহানি হয় এমনভাবে ব্যানার-পোস্টার না লাগাতে বলা হয়েছে। কিন্তু অনুমোদন পাওয়ার পর শুরু হয়েছে শর্তভঙ্গের পালা। এখন যে যেখানে পারছেন ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে দিচ্ছেন।

অন্যদিকে গত ১৩ অক্টোবর এক বিবৃতিতে রাজধানীর অননুমোদিত বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার দ্রুত অপসারণের তাগিদ দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলন উপলক্ষে সিটি করপোরেশন থেকে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পূর্বানুমতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুমোদন নিয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগও।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মঞ্চ সাজ-সজ্জা কমিটির সদস্য সচিব এবং পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন নিয়েই সম্মেলনের প্রচারণা চলছে।

প্রসঙ্গত, এ বছর ১৪ মে জাতীয় পার্টির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে নগরী ছেয়ে ফেলা হয়। পরদিন (১৫ মে) সংবাদ সম্মেলন করে এর তীব্র সমালোচনা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। নগরভবনে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা নগরী সুন্দর করতে অনেক কাজ হাতে নিয়েছি। শোভাবর্ধনের জন্য ফুটওভার ব্রিজে গাছ লাগিয়েছি। অথচ তার ওপর ব্যানার লাগানো হয়েছে। দেয়াল পরিষ্কার করে রং করেছি, তার ওপর পোস্টার মারা হয়েছে। এমনকি গাছের গায়ে, ফ্লাইওভারের পিলারে পোস্টার মারা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

গত বছর দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন রাজপথে অনির্ধারিত স্থানে ব্যানার-পোস্টার না লাগানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু তার কথা কেউ শোনেননি। এর ফলে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর মেয়র নিজেই সিটি করপোরেশনের এক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে বেশ কিছু ব্যানার-পোস্টার অপসারণ করেন। এ সময় তিনি তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদেরকে বাকিসব ব্যানার-পোস্টার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তখন সিটি করপোরেশনের লোকজন অভিযান চালিয়ে ব্যানার-পোস্টার অপসারণ করলেও পরবর্তীতে এ ধরনের অভিযান স্তিমিত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে ফ্রি স্টাইলে চলছে নগরীতে ব্যানার-পোস্টার লাগানোর কাজ।



মন্তব্য চালু নেই