‘সাতক্ষীরায় দুই শিশু নির্যাতনের সেই ছবিটি সাজানো’

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দুই শিশু নির্যাতনের যে ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সাজানো বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন।

এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামনগরের কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের তিন সহোদর গোলাম মোস্তফা, আব্দুল কুদ্দুস ও আবু মুসার মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ অনেক দিনের।

সম্প্রতি গোলাম মোস্তফা তার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে লোক চলাচল বন্ধ করতে খেজুর কাঁটার একটি বেড়া দেন। এই বেড়া সরিয়ে সেখানে খেলতে আসে পাড়ার শিশু মো. ইয়াসিন (৮) ও মো. নাসিম (৯)।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গোলাম মোস্তফা ও তার ছেলে গোলাম হোসেন শিশু দুটিকে ধরে বেঁধে রাখেন। কয়েক মিনিট পর তা খুলেও দেন।

এই খবর পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় শিশু দুটির বাবা প্রতিবেশী আবদুল হামিদ ও ইসমাইল হোসেন গোলাম মোস্তফার বাড়িতে হামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম মোস্তফা শিশু দুটিকে চড় থাপ্পড় দিয়ে বেঁধে রাখার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পায়ে শেকল দেয়া এবং পুরো দেহ রশি দিয়ে পেঁচিয়ে নির্যাতন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছবিটি সাজানো এবং তা ঘটনার তিন দিন পর ভিন্ন স্থান থেকে তোলা হয়েছে। সিলেটের শিশু রাজনের মর্মান্তিক ঘটনাকে পুঁজি করে শিশুদের ব্যবহার করে পরিকল্পিত ছবি তুলে যে ঘটনা সাজানো হয়েছে তার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।’

তবে শিশু নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার হবে। ছবির এই গাছটি গোলাম মোস্তফার বাড়ির নয় বলে জানান তিনি।

ঘটনাস্থল শ্যামনগরের কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রাম ঘুরে এসে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাইয়েদ মঞ্জুর আলম জানান, নির্যাতনকারী গোলাম মোস্তফার বাড়ি থেকে ছবি নেয়া হলে তার সাথে বাড়িঘরের ছবি আসার কথা। কিন্তু ছবিতে শিশু দুটিকে যে গাছে বেঁধে রাখা দেখানো হয়েছে সেই গাছটি নির্যাতিত শিশু ইয়াসিনের বাড়ির একটি গাছের।

শ্যামনগরের জয়নগর গ্রামের শিশু নাসিম ও ইয়াছিনকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ৮ ধারায় বুধবার শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি গোলাম মোস্তফাকে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর আসামি গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম হোসেনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক জানান, ঘটনাটি খুব গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিশু নির্যাতনের ঘটনা এবং তার পরবর্তী ছবি সাজিয়ে তা গনমাধ্যমে প্রকাশের ঘটনা- সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই