সাতক্ষীরার খবর (২১/৯/১৪)

সাতক্ষীরায় তিন স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা ॥ প্রাইভেটকারসহ দুই অপহরণকারী আটক
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সুভাষিনী বাজারে তিন স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টার সময় প্রাইভেটকারসহ দুই অপহরণকারীকে আটক করেছে এলাকাবাসী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তালা উপজেলার শিরাশুনী গ্রামের তিন স্কুল ছাত্রী সুভাষিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসার পথে ৫ জন অপহরণকারী তাদেরকে জোর করে প্রাইভেটকারে উঠানোর চেষ্ঠা করে। এসময় এলাকাবাসীরা এগিয়ে আসলে ৩ জন অপহরণকারী পালিয়ে গেলেও ড্রাইভারসহ দুই অপহরণকারীকে আটক করে এলাকাবাসী।
আটককৃতরা হলো-যশোরের কেশবপুর উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামের আক্কাস সরদারের ছেলে আক্তারুজ্জামান (২৬) ও সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার ড্রাইভার জাকির হোসেন (৩০)।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম রেজা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

জামায়াত-শিবিরের ২৩ নেতা-কর্মী আটক
সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের ২৩ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতভর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৫ জন, তালা উপজেলায় ১ জন, কলারোয়ায় ৩ জন, শ্যামনগরে ৮ জন ও কালিগঞ্জে ৪ জন ও পাটকেলঘাটায় ২ জন। তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থক বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
জেলা পুলিশের তথ্য কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃতদের নামে বিভিন্ন থানায় সহিংসতারসহ একাধিক মামলা রয়েছে এবং তারা হরতালের নামে নতুন করে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল।

প্রতারনার মামলার বাদির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার বাদিকে টাকা না দিয়ে নানাভাবে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরার কলারোয়ার ঝাপাঘাট গ্রামের কলেজ ছাত্র জুলফিকার আলম শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, একই উপজেলার পারিকুপি গ্রামের ভুলোক চন্দ্র দত্তের ছেলে কুশোডাঙা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রামপ্রসাদ দত্ত স্বাস্থ্য সহকারি পদে চাকরি দেওয়ার জন্য ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার কাছ থেকে নগদ এক লাখ টাকা গ্রহণ করেন। চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাওয়ায় রামপ্রসাদ দত্ত রুপালী ব্যাংকের কলারোয়া শাখার এক লাখ টাকার একটি চেক দেন। হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় তিনি ২০১১ সালের ২১ জুলাই আদালতে রামপ্রসাদ দত্তের বিরুদ্ধে এনআই এক্টে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি (এসসি-৩৮/১২) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গত ১০ আগষ্ট তিনি আদালতের কাঠগোড়ায় হাজির হলে বিচারক আসামীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বাইরে যেয়ে মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য উভয়পক্ষকে পরামর্শ দেন। এরই ভিত্তিতে ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আজাহারুল ইসলাম, তার আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল ওহাব, আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. বাবু, অ্যাড. মামুন তাকে নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ সাহেবের স্টেনোগ্রাফারের ঘরে এসে আলোচনায় বসেন। এ সময় পিপি অফিসের পিওন আব্দুল আজিজ ও বিপ্লব হাজির ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এক লাখ টাকা তাকে ফেরৎ দেওয়া নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে টাকা না দিয়ে অ্যাড. আজাহারুল ইসলাম তাকে বিচারকের কাছে টাকা পেয়েছি মর্মে বলে আসতে বলেন। উক্ত পিপি সাহেবের কথামত কাজ না করলে তাকে জেল হাজত খাটানোর হুমকি দেওয়া হয়। এরপর গত ১০ আগষ্ট আপোষ মীমাংসার নামে ওই আইনজীবী অ্যাড. শেখ আজাহারুল ইসলামের মাধ্যমে তার (জুলফিকার) কথামত তার ভাইকে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে চলে যাওয়া, আপোষমূত্রে মীমাংসা না করলে গৃহীত মক্কেলের এক লাখ টাকা ফেরৎ প্রদানের কথা উল্লেখ করে আসামী রামপ্রসাদ দত্তের পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. গাজী মোঃ আব্দুস সালাম গত ২৫ আগষ্ট লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। টাকা না পাওয়ার বিষয়টি তিনি লিগাল নোটিশের জবাবে উল্লেখ করেছেন। প্রতিকার চেয়ে তিনি গত ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জজ কোর্টের পিপি বরাবর অ্যাড. আজাহারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রামপ্রসাদ দত্তসহ তার লোকজন তাকে (জুলফিকার) জামায়াত শিবিরের ক্যাডার ছাড়াও সন্ত্রাসী বলে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাম প্রসাদ দত্ত ও জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আজাহারুল ইসলামসহ সকল ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, জজকোর্টের পিপি ও উর্দ্ধতন প্রশাসিনক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল কাদের, আবু হায়াত মোস্তফা কামাল (বাবু) ও মোস্তাফিন আহম্মেদ বাবু।

‘প্রবেশন কার্যক্রম’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
‘প্রবেশন কার্যক্রম’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি সাতক্ষীরার আয়োজনে এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান। জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, “সরকার প্রবেশন আইনে অপরাধীদের দোষ স্বিকারের মাধ্যমে শাস্তির বিধান কমানোর শাস্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অপরাধ হলো সামাজিক একটি ব্যাধি। অপরাধীকে দীর্ঘকালীন শাস্তি না দিয়ে পরবর্তীতে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসাবে তাদের চরিত্র সংশোধন এবং তাদেরকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচির আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ‘প্রবেশন আইন’ সম্পর্কে আইনজীবিদের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে ধারনা দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে প্রবেশন আইনের উদ্দেশ্য হলো, অপরাধীকে সংশোধন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসন করা।” মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মহসীন আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লস্কার তাজুল ইসলাম, বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. মোঃ ওসমান গণি, প্রবেশন মামলার রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি অ্যাড. শেখ রায়হান আলী, প্রবেশন মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবি অ্যাড. খায়রুল বদিউজ্জামান, সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান। মতবিনিময় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ মুসসিন আলী। ‘প্রবেশন কার্যক্রম’ শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার কে.এম.ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ।
এসময় উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জেলা জেল সুপার এম.এ জাহেদ, জেলা বার এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি বাশারত উল্লাহ আওরঙ্গী, সানজিদা খাতুন, মনিরা বেগম, ব্রাক জেলা প্রতিনিধি শহীদ হাসান প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রবিউল হাসান, বিবি খাদিজা, বিষ্ণপদ পাল, শহর সমাজসেবা কর্মকতা সহিদুর রহমান প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দ রাশেদুল হাসান। মতবিনিময় সভা শেষে সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।

সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার ॥ শ্যামনগর পাউবোর ৮০ স্থানে ফাটল, ৩০ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে
দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় শ্যামনগর উপকুলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন খোলপেটুয়া,কপোতক্ষ,চুনা,আড়পাংগাসিয়া, কালিন্দা,মালন্ঞ নদীতে হঠাৎ অস্বাভাবিক জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় পাউবো বেড়ীবাঁধ গুলি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ২৮ কিঃমিঃ বেড়ীবাধের ৮০ স্থানে ব্যাপক ফাটল ধরেছে। পাউবোর বাঁধের তলদেশ দিয়ে লোনাপানি চুয়ে ভিতরে প্রবেশ করায় ৩০ গ্রামের মানুষের মধ্যে নদী ভাংগন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা শনিবার সন্ধা থেকে ফাটল কবলিত স্থান গুলো পাহারা দিচ্ছে বলে সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শনে গেলে সাধারন মানুষ জানায় । উপজেলার গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মাসুদুল জানান, টানাবর্ষন ও পূর্ণিমা জোয়ারে সুন্দরবন সংলগ্ন নদী গুলোতে অস্বাভাবিক জোয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউনিয়নে পাউবো বেড়ীবাঁধের কানায় কানায় লোনাপানি টইটুম্বুর। নাপিতখালী, গাঙড়ামারী ও জেলেখালী এ তিনটি স্থানের পাউবো বেড়ীবাঁধ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ৯ নং সোরা গ্রামের মোহাম্মাদ আলী ও মোস্তফা মল্লিক জানান,নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়া মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহুর্তে সরকারি বেসরকারি ভাবে সাহায্যের প্রয়োজন। মুন্সীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, মালঞ্চ নদীতে জোয়ার বৃদ্ধিতে ইউনিয়নের পূর্ব কালিনগর ভোলা সরদারের বাড়ী হতে পূর্ব প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পাউবো বেড়ীবাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সরকার নির্মিত কার্পেটের রাস্তা অধিকাংশ ভেঙ্গে গেছে। ওই স্থান দিয়ে লোনা পানি ভিতরে প্রবেশ করছে। বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে তিনি জানান। পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারে খোলপেটুয়া ও কপোতক্ষ নদীকে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন ঝাপালি, কামালকাটি ও বন্যতলা এবং কপোতক্ষ নদী সংলগ্ন চাউলখোলা নামক স্থানে পাউবো বেড়ীবাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত থাকলে যেকোন মুহুর্তে ক্ষতিগ্রস্থ স্থান ভেঙে পুরো পদ্মপুকুর ইউনিয়ন লোনা পানিতে তলিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। মানুষের মাঝে আইলা আতংক বিরাজ করছে। কাশিমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আঃ হামিদ বলেন, ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন জলকপাট ভেঙে লোনাপানি ভিতরে প্রবেশ করছে। পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও আজ করি- কাল করি দীর্ঘ কালক্ষেপনের ফলে অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মানুষের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসে খোজ নিলে আবহাওয়াবিদ রিপন জানান, বর্তমানে ৩ নং সংকেত অব্যাহত আছে। ফলে নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংকেত দূর হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সার্বিক বিষয়ে ৫ নং পোল্ডারের পাউবো এসও নিখিল রঞ্জন এবং সাতক্ষীরা পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ হামিদের সাথে যোগাযোগ হলে জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ স্থান পরিদর্শণে আছি। শ্রীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই