সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড : অধরাই থেকে গেছে খুনিরা

তিন বছরেও আদালতে জমা হয়নি আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন। এই তিন বছরে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৩২ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ১১৬ জনকে। কিন্তু শেষ হয়নি তদন্ত। হত্যার তিন বছরেও খুনি কারা বা কেনই খুন করা হয়েছে, সেসব বিষয় অধরাই থেকে গেছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর ফার্মগেটের পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সাংবাদিক মেহেরুন রুনি। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিজ বাসায় সাংবাদিক দম্পতি খুনের ঘটনায় সারা দেশে সাংবাদিক থেকে শুরু করে পেশাজীবী সকলেই প্রতিবাদ এবং ঘাতকদের গ্রেফতারের দাবি করেছিলেন। ওই সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা হবে বলে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়, তৎকালীন অনেক মন্ত্রীই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের গ্রেফতারে নানা আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম ও পরে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রবিউল আলম সাংবাদিক দম্পতি হত্যার মামলার তদন্ত করেন।

হত্যা মোটিভ বের করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র‌্যাবে স্থানান্তর করা হয়। র‌্যাবে প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন সিনিয়র এএসপি জাফর উল্লাহ। পরে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন এএসপি ওয়ারেছ আলী মিয়া।

আলোচিত এই হত্যার আট মাস পর ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর বনানী থানার হত্যা ও ডাকাতি মামলায় আটক পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার আসামি। গ্রেফতার করা হয় নিহত দম্পতির কথিত পারিবারিক বন্ধু তানভীর রহমান এবং তাদের বাসার দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালকে। পরে আরেক দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অগ্রগতি বলতে এটুকুই। তানভীর রহমান গত ২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।

র‌্যাবের তদন্তে সন্দেহভাজন মোট ১৬ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। এ ছাড়া আলামত হিসেবে জব্দ করা ছুরি ও পোশাকের নমুনা। কিন্তু তাতেও খুনি শনাক্ত করা যায়নি।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যারহস্য উন্মোচনে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই দাবি করে সবকিছু পর্যালোচনা করেই এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এদিকে সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের ইনভেস্টিগেশন এবং ফরেনসিক উইংয়ের সহকারী পরিচালক (সহকারী পুলিশ সুপার) ওয়ারেছ আলী মিয়া। এ কারণে আগামী ১ এপ্রিল পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন নির্ধারণ করা হয়।

আজ বুধবার এ হত্যার তিন বছর পার হচ্ছে। এ দিন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা। এই নিষ্ঠুর হত্যার বিচার দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে দুপুর ১২টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সাংবাদিক সমাজ।



মন্তব্য চালু নেই