সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কি একই সঙ্গে?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দুর্ধর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কী একই সঙ্গে কার্যকর হতে যাচ্ছে?

বিষয়টি সরকার স্পষ্ট না করলেও পরিস্থিতি সে দিকেই মোড় নিচ্ছে। আর বাংলাদেশে একসঙ্গে একাধিক আসামির ফাঁসি কার্যকরের একাধিক নজিরও রয়েছে।

তবে বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগে সাকা-মুজাহিদের রায় আলাদা সময়েই হয়েছে এবং সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশও হয়েছে আলাদা সময়ে।

তবে আপিল বিভাগে এই দুই যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে একই সঙ্গে। এর পর রায়ের কপি পড়ে শোনানো থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজই হয়েছে একই সঙ্গে। এছাড়া রিভিউ পিটিশন দাখিল এবং রিভিউ পিটিশনের শুনানি একদিন আগ-পাছ করে হলেও রিভিউ খারিজের রায় হয়েছে একই দিনে। এদের দুজনকে রাখাও হয়েছে একই কারাগারে পাশাপাশি সেলে। তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের দেখা সাক্ষাত এবং রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শোনানোর কাজ থেকে শুরু করে ডাক্তারি পরীক্ষা সবই হয়েছে একই সময়ে।

ফলে ধারণা করা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছ প্রাণভিক্ষার আবেদন সুরাহার পর এই দুই যুদ্ধাপরাধীকে একই সময়ে ফাঁসির রশিতে ঝুলতে হবে।

ঠিক একই সময়ে দুজনকে ফাঁসিতে ঝুলানোর একাধিক নজির ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনির ফাঁসিও কার্যকর করা হয় একই দিনে। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয় আর্টিলারি কোরের অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, বরখাস্ত হওয়া কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও ল্যান্সার ইউনিটের অবসরপ্রাপ্ত লে.কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন।

রাত বারোটা এক মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষ প্রথমে কর্নেল মহিউদ্দিন ও বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করে। রাত সাড়ে বারোটার পর ফাঁসি দেয়া হয় ফারুক রহমান ও সুলতান শাহরিয়ার রশিদকে। সবশেষে লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। পরে তাদের লাশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একই দিনে ছয় শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয় ভিন্ন ভিন্ন কারাগারে। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইসহ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ছয় শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ওই দিন রাত ১২টা ৫ মিনিটে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে শায়খ আবদুর রহমানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে একই সময়ে বাংলাভাই ও আবদুল আউয়ালের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

প্রায় একই সময়ে খালেদ সাইফুল্লাহর ফাঁসি কার্যকর করা হয় পাবনা জেলা কারাগারে। ইফতেখার আল হাসান মামুন ও আতাউর রহমান সানির ফাঁসি কার্যকর করা হয় কাশিমপুর কারাগারে।

এ ব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুইজনের ফাঁসি এক সঙ্গে কার্যকর করতে কোনো সমস্যা নেই। এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একাধিক ব্যক্তির ফাঁসি একসঙ্গে কার্যকর করা হয়েছে।

তাছাড়া একই নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে তাদের ফাঁসি একসঙ্গে কার্যকরে আইনগত কোনো বাধাও নেই বলে মনে করেন একজন আইনজীবী।



মন্তব্য চালু নেই