সাঈদীর ফাঁসি চেয়ে রিভিউয়ের শুনানি ‘বৃহস্পতিবার’
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বদলে ফাঁসি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এবং খালাস চেয়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ আবেদনের শুনানি হতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার। সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য জানান। কার্যতালিকায় থাকলেও সোমবার এই শুনানি হয়নি।
এই শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজ মামলাটি শুনানির জন্য ১৪৭ নম্বরে ছিল। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবার মামলায় রিভিউ শুনানি হতে পারে। এই দুই দিনে আমরা আরও ঝালাই করে নিতে পরবো।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল বেঞ্চে মামলাটি শুনানি হবে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার ফাঁসির আদেশের পর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব বলায়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা করে চার পুলিশ সদস্যকে হত্যা, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে হামলা, আগুন, বগুড়ায় চাঁদে সাঈদীকে দেখার গুজব তুলে থানা, উপজেলা পরিষদসহ সরকারি সম্পত্তিতে হামলা, সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলাসহ নানা ঘটনা ঘটায় সাঈদী সমর্থকরা।
এসব তাণ্ডবের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে আপিল করেন সাঈদী। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
রায় ঘোষণার এক বছর পর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনে পাঁচটি যুক্তি দেখানো হয়।
এর পাঁচ দিন পর খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন সাঈদী। মোট ৯০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাস পেতে ১৬টি যুক্তি দেখানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরে বিসাবলী নামে একজনকে হত্যা, তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণের এবং এক থেকে দেড়শ হিন্দুকে জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।
এ ছাড়াও হত্যা, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের অভিযোগে সাঈদীর ১২ বছর, সাত বছর এবং ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে।
এরই মধ্যে এই দণ্ড কার্যকর শুরু হয়েছে। তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয় সেখানে। বিসাবলী ছাড়াও ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার দায়ে এই দণ্ড পেয়েছিলেন তিনি। তবে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার দায় থেকে তাকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাঈদী পিরোজপুরে দেইল্যা রাজাকার নামে কুখ্যাত ছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরাজয়ে আগে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এলাকায় ফেরেন তিনি। পরে তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত হন এবং এক পর্যায়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আসীন হন।
মন্তব্য চালু নেই