সাঁওতাল পল্লীতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার পুলিশের

বাংলাদেশে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের উচ্ছেদের সময় তাদের ঘরবাড়িতে পুলিশের আগুন ধরিয়ে দেয়ার যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, সেটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছে স্থানীয় পুলিশ।

তবে একইসাথে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলছে।

আল-জাজিরা টিভি সম্প্রতি ভিডিওটি প্রকাশ করেছে, যেটি এখন ইউটিউব হয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় জায়গা পাচ্ছে।

সাঁওতালরা বলেছেন, গত ৬ই নভেম্বর তাদের উচ্ছেদের সময় সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে পুলিশ ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়- তারা নিজেরা তা দেখেছেন।

গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জায়গা থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে আল-জাজিরা টেলিভিশনে যে প্রতিবেদন প্রচার হয়, সেখানে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাঁওতালদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে। সাঁওতালদের বসতির পাশেই দাঁড়িয়ে অনেক পুলিশ গুলি করছে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তাদেরই মধ্য থেকে মাথায় হেলমেট এবং বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়া একজন পুলিশ সদস্য সাঁওতালদের বাঁশ এবং ছনের তৈরি ঘরের কাছে গিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় এবং পাশের ছনের ঘরগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সিভিল ড্রেসে কয়েকজনকে জনকে দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওতে পুলিশের আগুন ধরানোর ঘটনা পরিষ্কার দেখা গেলেও পুলিশ তা মানতে রাজি নয়।

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম বলছিলেন, পুলিশ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়নি। এরপরও তারা ভিডিওটি খতিয়ে দেখবেন।

তিনি বলছিলেন, “আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছে। আগুনের পাশে হয়তো পুলিশকে দেখা যেতে পারে। কারণ পুলিশ আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। এবং পুলিশ দমকল বাহিনীকে ডেকেছিল। ”

”দমকল বাহিনীও সেখানে গিয়েছিল। ততক্ষণে হয়তো ছোট ছোট কিছু ঘর পুড়ে গেছে। ফলে পুলিশের আগুন লাগানোর বিষয় সঠিক নয়। এরপরও ভিডিওটি খতিয়ে দেখা হবে। ”

যদিও পুলিশ ভিডিওর ছবি মানতে রাজি নয়। কিন্তু আল-জাজিরার ঢাকার কার্যালয় থেকে একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, ভিডিওটি সংগ্রহ করার পর তা যাচাই করেই তারা প্রচার করেছেন।

গত ৬ই নভেম্বর উচ্ছেদের এই ঘটনায় গুলিতে তিনজন সাঁওতাল মারা যান। অনেকে আহত হয়েছেন। আর বসতি আগুনে পুড়ে গেছে।

সেখানকার সাঁওতালদের একজন নেতা সেলিমন বাস্কে বলেছেন, “পুলিশের সাথে যখন সংঘর্ষ হচ্ছিল। একপর্যায়ে আমাদের চোখের সামনেই প্রথমে পুলিশ আমাদের ঘরে আগুন দেয়। ভিডিওর ছবি সঠিক এবং আমরা মামলাতেও তাই বলেছি। ”

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্যরা সোমবার গোবিন্দগঞ্জে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাঁওতালদের নিয়ে গণ-শুনানি করেছেন। সাঁওতালরা তীর ধনুক এবং লাঠি নিয়ে সেই শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মামলা থাকায় ভয়ের কারণে তারা তীর ধনুক নিয়ে শুনানিতে আসার কথা তাদের জানায়।

তিনি আরও বলেন, সাঁওতালদের উচ্ছেদের ঘটনা আইনগত ভাবে হয়নি। কারণ যথাসময়ে নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। শুনানি থেকে তারা এই চিত্র পেয়েছেন।

এদিকে, উচ্ছেদের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের আদেশে সাঁওতালদের ‘বাঙ্গালি দুষ্কৃতকারী’ বলা হয়েছিল, এ নিয়ে এক রিট মামলায় হাইকোর্টের তলবে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আদালতে হাজির হয়ে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।-বিবিসি বাংলা

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন



মন্তব্য চালু নেই