সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশের পুলিশী ব্যবস্থাকে রাজনীতির মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই পুলিশী ব্যবস্থাকে যতোদিন না রাজনীতির হাত থেকে মুক্ত করা হবে ততোদিন বিচার বিভাগও স্বাধীন হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকীকরণ নিশ্চিত করতে পুলিশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সাত বছর’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে উল্লেখ করে ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘দেশের বিচার ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। এ লক্ষ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, দেওয়ানি কার্যবিধিসহ প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হলে ব্রিটিশদের সৃষ্ট আইনি ব্যবস্থার সংস্কার করে তা পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। একটি মামলা নিষ্পত্তি করতে যদি ৫০ থেকে ১০০ বছর লেগে যায়, তাহলে এমন বিচার বিভাগ দিয়ে কী লাভ?’ দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে নিম্ন আদালতে জামিন না পেলে মানুষ উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন পেতো। কিন্তু বর্তমানে নিম্ন ও উচ্চ আদালতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’
আলোচনা সভায় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিচার বিভাগের কার্যক্রমের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ এখনো চলছে।’ এ বিভাগের স্বাধীনতার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রশাসনের হাত যতোদিন না সংকুচিত করা হবে, ততোদিন পর্যন্ত বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে না। এছাড়া বিচার বিভাগকে কাঠামোগতভাবে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। অতীতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা মানা হতো। কিন্তু বর্তমানে তা চরমভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। লিখিত বক্তব্যে মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ৭ বছর পূর্ণ হলেও মাসদার হোসেন মামলায় পৃথকিকরণের সুপারিশগুলো আজও বাস্তবায়িত হয়নি।’
বিচার বিভাগ পৃথকিকরণে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে মাসদার হোসেন মামলার রায় সংশোধনে উদ্যোগী হওয়া, সকল অবস্থায় কোনো বিচারকের বদলি বা কর্মস্থল পরিবর্তন করার প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে হওয়া, বিচার বিভাগের তদারকির জন্য সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে পৃথক সচিবালয় চালু, মামলার জট নিরসনে উদ্যোগী হওয়া, হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগে জেলা জজদের সংখ্যা বাড়ানো ও মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিল সংশোধন তথা আইন প্রণয়নের এখতিয়ার সচিবালয় থেকে সংসদে স্থানাস্তর করা।’
সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই