সম্পত্তি আত্মসাত মামলা: রাগীব আলীর ১৪, ছেলের ১৬ বছর কারাদণ্ড

সিলেটের তারাপুর চা-বাগানের হাজার কোটি টাকার ভূমি প্রতারণার মাধ্যমে দখল ও অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে আত্মসাতের দায়ে রাগীব আলী, তার ছেলে-মেয়েসহ ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আলোচিত এই মামলায় তারাপুর চা-বাগানের মূল সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে আলোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলীকে পৃথক ৪টি ধারায় মোট ১৪ বছর, তার ছেলে আবদুল হাই, মেয়ে রোজিনা কাদির, জামাতা আবদুল কাদির, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার দেওয়ান মোস্তাক মজিদকে পৃথক তিনটি ধারায় প্রত্যেককে ১৬ বছর করে কারাদণ্ড ও ১০ টাকা হাজার করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো এ রায় দেন। রায়ে আসামিদের সাজার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি মো. মাহফুজুর রহমান।

ইতোমধ্যে রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই একটি জালিয়াতি মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া রাগীব আলীর মেয়ে রোজিনা কাদির ও জামাতা আবদুল কাদির পলাতক।

এর আগে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করা হয়েছিল। তবে রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে ইউসুফ খান নামের এক ব্যক্তি রায় ঘোষণা স্থগিত রাখার আবেদন জানান। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত দুই সপ্তাহের জন্য রায় ঘোষণা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

এ সময়ের মধ্যে রাগীব আলীর ছেলে মানসিক অসুস্থতার পরীক্ষা ৩০ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ওসমানী হাসপাতালের আবদুল হাইয়ের মানসিক পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেন সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।

তবে গত ৩০ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। ওই সময় আদালত প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব হওয়ার কারণ লিখিতভাবে পাঁচ দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন। তবে আদালতের নির্দেশের তিন দিনের মধ্যেই গত রোববার প্রতিবেদন দাখিল করে হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আদালতে রাগীব আলী ছেলে ও মামলার অন্যতম আসামি আবদুল হাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিবেদন দাখিল করার পর ৬ এপ্রিল রায়ের এ তারিখ ধার্য করেছিলেন বিচারক।

গত রোববার আদালতে দাখিলকৃত মেডিকেল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবদুল হাইয়ের মানসিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যাও নেই।

ওসমানী হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আর কে এস রয়েলের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের সাত সদস্যের একটি বোর্ড আবদুল হাইয়ের স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই বোর্ডে মেডিসিন, হৃদরোগসহ অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরাও ছিলেন।

উল্লেখ্য, ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার উপর তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। নব্বইয়ের দশকে জালিয়াতির মাধ্যমে এটি দখলে নেন রাগীব আলী। এ নিয়ে চলা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে একটি রিট পিটিশনের ভিত্তিতে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি তারাপুরে রাগীব আলীর দখলদারত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।

একইসঙ্গে রাগীব আলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে করা মামলা দুটিকে সক্রিয় করার নির্দেশনাও দেন। পরে ১০ জুলাই পিবিআই মামলার চার্জশিট দাখিল করে।

তারাপুর চা-বাগান বন্দোবস্ত নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলায় গত ২ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া, পলাতক থাকা অবস্থায় ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ পত্রিকা সম্পাদনা করার অভিযোগে আরেকটি মামলায় ছেলেসহ রাগীব আলীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।



মন্তব্য চালু নেই