ছিটমহলবাসী এখন নতুন প্রস্ফূটিত ফুল: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন থেকে আর ছিটমহল বলে কিছু থাকবে না। সব ছিটমহল রাষ্ট্রের অংশ। আপনাদের আর কেউ ছিটমহলবাসী বলবে না। ছিটমহলের উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ায় প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা বহুমুখী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকে আপনারা বাংলাদেশের অংশ। এখানে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব ছিটমহলবাসী এখন রাষ্ট্রের নাগরিক। দাসিয়ারছড়া এখন বাংলাদেশের অন্তর্গত ফুলবাড়ির এলাকা। আমি ফুলবাড়ীতে এসেছি। ফুলবাড়ী এখন নতুন প্রস্ফূটিত ফুলের বাগান। এখানকার নাগরিকরা একেক জন এককটি ফুল।’

বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা এখন আর নিজেদের ছিটের বাসিন্দা মনে করবেন না। আপনারা যেন অন্ধকারে না থাকেন সেজন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। হাইস্কুল, মসজিদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি। চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া কাঁচা রাস্তা পাকা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছিটমহলের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।’

দীর্ঘ ৬৮ বছর পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। তাকে স্বাগত জানাতে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে দাসিয়ারছড়া ছিটমহলকে।

দুপুরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ছিটবাসীর চাওয়া-পাওয়া নিয়ে খোলামেলা কথা বলবেন তিনি।

রাস্তা ঠিক করাতেই গাড়িতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীপাল্টে গেল ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার নাম। আর পাল্টে গেল এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। প্রধানমন্ত্রীও তাদের তাদরে পাশে গিয়ে নিজের করে নিলেন আজ বৃহস্পতিবার। বললেন, ‘আমরা একগুচ্ছ সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল পেয়েছি। আপনারা আমাদেরই লোক। অনেকদিন আপনারা বঞ্চিত ছিলেন, এখন আর ভাববেন না আপনাদের কেউ নেই।’

সেই দাশিয়ার ছড়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রাস্তা দ্রুত মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রী এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি হেলিকপ্টারে না গিয়ে গাড়িতে গিয়েছেন। কারণ দেশের উন্নয়ন কাজে ‘ঢিলেমি’ সম্পর্কেও ধারণা রয়েছে তার। আর এ কথা তিনি নিজে সমাবেশে বক্তব্যে বলেছেন।

বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক সফরে দাশিয়ার ছড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করেই এই ১৯ কিলোমিটার রাস্তা গাড়িতে এসেছি। কারণ আমি জানি আমি গাড়িতে আসলে এ রাস্তা দ্রুত মেরামত হবে।’

এরপর বক্তব্যে ছিটমহলবাসীদের জন্য নেয়া নানান উন্নয়ন প্রকল্প করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্যে দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার নাম। যার নতুন নাম হবে মুজিব-ইন্দিরা দাশিয়ারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (বৃহস্পতিবার) দাশিয়ারছড়া এসে এ ইউপি কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৬৮ বছরের ইতিহাসে কোনো সরকার প্রধানের এই প্রথম ছিটমহলে আগমন। ছিটমহল হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের মনে যে আশার আলো দেখেছে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের মধ্য দিয়ে তা পূরণ হবে। শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়ের।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ এসএম খুরশিদ-উল আলম  স্বাক্ষরিত সফরসূচিতে জানিয়েছিলেন, সকালে হেলিকপ্টারে করে ফুলবাড়ি হেলিপ্যাডে নামবেন। এরপর সড়ক পথে দাশিয়ারছড়া যাবেন। প্রধানমন্ত্রী দাশিয়ারছড়া কালীহাট বাজারসংলগ্ন প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা  বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি মুজিব-ইন্দিরা দাশিয়ারছড়া ইউপি কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বিদ্যুৎ-সংযোগসহ ১৬টি কাজের ফলক উন্মোচন ও ১৬টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হচ্ছে বিগত ৬৮ বছরের ছিটমহলবাসীর বন্দিদশা থেকে মুক্তি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে প্রবাস জীবন যাপন করেছেন। তিনি জানেন রাষ্ট্র ছাড়া জীবন যাপনের কষ্ট। স্বাধীনতা ছাড়া বাঁচার যন্ত্রণা। সে উপলব্ধি থেকে তার সফল কুটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে আজকে ছিটমহলবাসীর মুক্তি ঘটেছে।’



মন্তব্য চালু নেই