সবচেয়ে কুৎসিত বাঘ

জ্বলজ্বলে নীল চোখ এবং আকর্ষণীয় উজ্জ্বল গায়ের রঙের জন্য শ্বেত বাঘগুলো মানুষের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণ। যদিও এই শ্বেত বাঘগুলো খুঁজে পাওয়া খুবই দুর্লভ। কেনিয়ার গহীন জঙ্গলে মাঝে মধ্যে দেখা মেলে এদের। আর দশটা বাঘ দেখতে যেমন হয় আকার আকৃতিতে তারাও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু সম্প্রতি একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারী সংস্থা পৃথিবীতে সবচেয়ে কুৎসিত দেখতে একটি শ্বেত বাঘের ছবি প্রকাশ করেছে।

বন্যপ্রাণী জগতে শ্বেত বাঘ খুঁজে পাওয়া খুবই দুর্লভ তাই খুঁজে পাওয়া মাত্রই তাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিড়িয়াখানায় এনে বন্দী করে রাখা হয়। শ্বেত বাঘটিকে দেখতে প্রতিদিন হাজার মানুষ চিড়িয়াখানায় ভিড় করে। শ্বেত বাঘটি এখন চিড়িয়াখানার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বাঘটির নাম দিয়েছেন কেনি। বর্তমানে কেনি নামের এই বাঘটিকে সংরক্ষন করে এর থেকে আরো প্রজনন বাড়ানোর কথা ভাবছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

তবে কেন এই বাঘগুলোর গায়ের রঙ সাদা হয় এ ব্যপারে পশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, পৃথিবীতে প্রতি দশহাজারের মধ্যে একটি বাঘ লুসিজমে আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহন করে থাকে। সাধারণত চামড়ার রঙের ভিন্নতাজনিত রোগটিকে লুসিজম বলে। এর রোগের কারণে পশুপাখির গায়ের চামড়ার রঙ পরিবর্তিত হয় এবং একই প্রজাতি থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়। বেশিরভাগ সময় তাদের গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা থাকে। এদের বেশিরভাগেরই চোখ নীল থাকে। যদিও এরকম সাদা কালো ডোরাকাটা বাঘ দেখতে ভালো লাগলেও বন্যপ্রাণীদের জন্য এটি চর্মরোগজনিত একটি জটিল ব্যাধি। আর এই রোগের কারণে তাদের প্রজননক্রিয়াও ব্যহত হয়। কখনো কখনো দেখা যায় এই রোগে আক্রান্ত কোন বন্যপ্রাণী যে সন্তানটি প্রসব করে তাকে এই রোগ নিয়েই পৃথিবীতে আসতে হয়।

স্বাস্থ্যবান শ্বেত বাঘগুলোকে প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া খুবই দুর্লভ। মাঝে মাঝে এদের গায়ে সাদা ডোরাকাটার জন্য শিকারের সময় এদের খেয়াল করা যায় না। কেনির বয়স যখন দুই বছর ছিল তখন তাকে আরকানাস থেকে উদ্ধার করা হয়। ২০০০ সালে উদ্ধার করা বাঘটি এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তবে বাঘটির চেহারায় রয়েছে বার্ধ্যকের ছাপ। তার মুখ আর দশটা স্বাভাবিক বাঘের তুলনায় অন্যরকম এবং সামনের দাঁতগুলো আঁকাবাকা।

বন্যপ্রাণী উদ্ধার সংস্থাটি কেনিকে উদ্ধার করার সঙ্গে তার একটি ভাইকেও উদ্ধার করেছে এবং তারও প্রায় একই অবস্থা। ধারণা করা হয়, জন্মের সময় জিনগত কারণে তারা এই রোগগুলো পেয়েছে বলে তাদের আকার আকৃতির এই অবস্থা। তবে কি কারণে এই রোগ বংশবিস্তারে বাধাগ্রস্থ করে তার কারণ এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার করে বলতে পারছে না পশুবিশেষজ্ঞরা। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর আশি শতাংশ শ্বেতবাঘই এই রোগের কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। যদিও বর্তমানে সুন্দরবনে এবং সাইবেরিয়াতে এধরণের বাঘ খুঁজে পাওয়া যায় না।



মন্তব্য চালু নেই