সন্তানের মাদকাসক্তি লুকানোর পরিণতি

দেশের অনেক পরিবারেই, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারে, সন্তানদের মাদকাসক্তি একটা বড় সমস্যা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মা এই ব্যাপারটা জানার পরও লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।

আজ পুলিশ কর্মকর্তা এবং তার স্ত্রীকে হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলায় তাদেরই মেয়ে ঐশী রহমানকে আদালত ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর মনোবিদরা বলছেন, বাবা-মা যদি সন্তানের মাদকাসক্তি লুকোতে যান তাহলে তার পরিণাম এমনই ভয়াবহ হতে পারে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল নিয়মিত মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসা করেন।

ড: কামাল বলেন ‘‘আমি বাবা-মাদের বলব আপনার সন্তান মাদকাসক্ত হলে সেটা চেপে রাখতে যাবেন না। এই সমস্যার চিকিৎসা করান, সবার সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করুন – নইলে হয়তো আমরা এরকমই দানবীয় পরিণাম দেখতে পাব।’’

২০১৩ সালের ১৪ই আগস্ট ঢাকার চামেলিবাগ এলাকায় নিজের বাড়িতে খুন হন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান এবং তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান।

দু বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচার চলার পর আজকের রায়ে প্রধান আসামি ঐশীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। আর হত্যাকান্ডের পর ঐশীকে আশ্রয় দেওয়ার দেওয়ার জন্য ঐশীর এক বন্ধুকে দুবছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

মেয়ের হাতে বাবা-মা খুন হওয়ার এই ঘটনায় বাংলাদেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এদিনের রায়ে বিচারক বলেছেন, ‘ঐশী রহমান মাদাকাসক্ত হলেও হত্যাকান্ডের সময় সে মাদকের প্রভাবে ছিলনা এবং পরিকল্পনা করেই সে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে।’

তবে যদিও আদালতের রায়ে বলা হচ্ছে হত্যাকান্ডের সময় ঐশী মাদকের প্রভাবে ছিল না, কিন্তু এই হত্যাকান্ডের পেছনে মাদকের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা কতটা?

নানা ধরনের মাদক এখন অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এ প্রশ্নের জবাবে মনোবিদ মোহিত কামাল বলেন, ‘যারা নিয়মিত ড্রাগ নেন, দেখা গেছে যে তারা তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেন। এই কাজের জন্য মস্তিষ্কের যে অটো-মেকানিজম থাকে, তাদের ক্ষেত্রে সেটা নষ্ট হয়ে যায়।’

অনেক পরিবারেই, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারে, সন্তানদের মাদকাসক্তি একটা বড় সমস্যা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মা এই ব্যাপারটা জানার পরও লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।

‘ফলে অনেক সময় ইমপালসিভ হয়ে বা তাৎক্ষণিক তাড়নায় তারা সাঙ্ঘাতিক সব কান্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। হয়তো ঠিক সেই মুহুর্তে তারা মাদকের প্রভাবে নেই, তারপরেও তারা তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।’

‘ঐশীর ক্ষেত্রেও যেভাবে সে বাবা-মাকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে, তাদের বুকের ওপর বসে ছুরি চালিয়েছে বলে আমরা খবরে জেনেছি, তাতেও বোঝা যায় সেও এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, রীতিমতো পরিকল্পনা করে ও ছক কষেই এই হত্যাকান্ড ঘটানোর কথা ভাবা হয়েছিল।

এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে ড: কামাল বলছেন, ‘এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাবা-মাকে সন্তানের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের চিকিৎসার পথে টেনে এনে মাদকের ফাঁদ থেকে বের করে আনতে হবে – খোলাখুলি বিষয়টা নিয়ে আত্মীয়স্বজন বা প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

ছেলে-মেয়ে যদি বাবা-মার কথা না-শোনে, তাহলে যার কথা সে শোনে – তিনি শিক্ষক-মামা-চাচা যেই হোন না কেন, তার সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে বলেন এই মনোবিদ পরামর্শ দিচ্ছেন।



মন্তব্য চালু নেই