সততা ও ভালবাসা দিয়ে লক্ষ মানুষের মন জয় করলো এক কৃষক সন্তান

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। সততা আর পরপোকারিতার জন্য যিনি ইতোমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। সম্প্রতি দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগ ধরা পড়েছে তার। তার চিকিৎসা এবং সেই চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের চেষ্টা দেখে হতবাক হয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ব্লগার ও সাংবাদিক আরিফ জেবতিক।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন:

‘এয়ারপোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট পেজের যাত্রা লগ্ন থেকে আমরা খুব নিবিড়ভাবে ভালোবাসায় যুক্ত। একেবারে গোড়ার দিকে এই পেজটিকে আমরা নিয়মিত প্রমোট করেছি। তাই চোখের সামনে থেকে দেখলাম একজন কৃষকপুত্রের ডেডিকেশন। এয়ারপোর্টের সব হয়রানির বিরুদ্ধে দুই নিঃসঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেটের নিরন্তর লড়ে চলা। এয়ারপোর্টের দুর্নীতিবাজ চক্রের কত ষড়যন্ত্র যে নস্যাৎ করতে হয়েছে, কত নিদ্রাহীন রাতে ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ মন খারাপ করে কথা বলেছেন, আমরা সবাই তাঁর সাহসকে বাহবা দিয়ে এগিয়ে যেতে বলেছি। কত হতদরিদ্র না জানা না বোঝা প্রবাসীরা যে ইউসুফ ভাইয়ের সাহস আর ডেডিকেশনে এয়ারপোর্টের হয়রানি থেকে বেঁচেছেন, তা হাতে গোনা যাবে না।

গত বেশ কিছুদিন ধরে মনখারাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অনলাইনে প্রায় অনিয়মিতই বলা চলে। এর মাঝে ZPY2GhTBJI8nশুনলাম ইউসুফ ভাইয়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছে, চিকিৎসার জন্য বিস্তর টাকা প্রয়োজন। একটা পোস্ট শেয়ারও করলাম। পরে আবার শুনলাম যে দ্বিতীয়বার টেস্ট হচ্ছে, টেস্টের রেজাল্টের পর কনফার্ম হওয়া যাবে। সবই ভাসাভাসা শোনা, আমি ঠিক বিষয়টি ফলো করার পর্যায়ে ছিলাম না।

এরই মাঝে মাহমুদুল হক মুন্সী (বাঁধন) এর একটি নোটিফিকেশন আর মাশরুফ হোসেইন এর আরেকটি নোটিফিকেশন চোখের কোণে দেখেছি। একটা গ্রুপ করা হয়েছে, সেই গ্রুপের নাম দেখে টের পাচ্ছিলাম যে ইউসুফ ভাইয়ের জন্য কিছু কাজ করা হবে। নেহায়েতই আমাদের বন্ধুবান্ধবের গ্রুপ নিশ্চয়ই – আচ্ছা, আগে টেস্টের রেজাল্ট তো আসুক, তারপর দেখা যাবে। এত উতলা হওয়ার কিছু নেই, ইউসুফ ভাইয়ের আর কী-ই বা হবে। এমনিতে ফোনও দিচ্ছি না, রোগশোক নিয়ে কথা বলতে কেন যেন কোনোদিনই পারি না।

আজ ঢাকা ফিরে একটু আগে গ্রুপে ঢুকলাম। টেস্টের খোঁজখবর করা দরকার, কাজকর্মের পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

গ্রুপে ঢুকেই চমকে গেছি। শত শত পোস্ট। ছোট ছোট পোস্ট। মানুষ সাধ্যানুসারে টাকা দিচ্ছেন। দুশ কী দুই হাজার টাকা।

মুহূর্তেই টাকা উঠে গেছে বিশ লাখ!

মাশরুফ হোসেইন পোস্ট পিন করে রেখেছেন – আপাতত আর টাকা লাগবে না।

অনেকে হা হুতাশ করে পোস্ট দিয়েছেন যে টাকা দিয়ে শরিক হতে পারার এই সুযোগটা তারা আপাতত পাচ্ছেন না। একজন বেকার পোস্ট দিয়েছেন যে তার টাকা দেয়ার সাধ্য নেই, তিনি রক্ত দিতে চান। একজন ক্ষুদ্র চাকুরিজীবী জানিয়েছেন এখন একেবারেই নিঃস্ব অবস্থা, ২৫ তারিখ বেতন পেলে তিনি কিছু টাকা দিতে চান। একজন এহরাম বাঁধা ছবি পোস্ট করেছেন, সৌদি আরবের কোন এক শহরে থাকা প্রবাসী, তিনি ইউসুফ ভাইয়ের জন্য ওমরাহ করতে মক্কা যাচ্ছেন।

আমি আর বাকি পোস্টগুলো পড়তে পারলাম না। চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।

মানুষের শুভ বোধের উপর থেকে মাঝে মাঝে আস্থা হারিয়ে ফেলি, হতাশ হয়ে পড়ি। বারবার আমি মানুষের উপর আস্থা রাখতে চেয়েছি। আশেপাশে আমার চাইতেও বড় বড় ভণ্ড যখন দিব্যি হেসে খেলে বেড়ায়, তখন দীর্ঘশ্বাস চেপে শীতনিদ্রায় চলে যেতে ইচ্ছা করে।

অথচ সততার সাথে কাজ করে যাওয়া কৃষকপুত্র ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফের জন্য মানুষ দাঁড়িয়েছে অগনিত মানুষ।

সততা আর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে শতগুণ বেশি ভালোবাসা নিয়ে ফিরে এসেছে মানুষ।

অথচ আমি অভাজন, মূর্খ দুর্বল আমি একজন সেই মানুষের উপর থেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলি।

হায়, এই পাপ থেকে আমার উদ্ধার হবে কবে?

আজ রাতে এই প্রথমবার ইউসুফ ভাইয়ের জন্য ভালোবাসার পাশাপাশি এক গভীর ঈর্ষাও বোধ করছি আমি।’

আরো পড়ুন: “ক্যান্সারের রিপোর্ট যেন ভুল না হয়, মানুষের মনে এই ভালোবাসা দেখে চলে যেতে চাই…”



মন্তব্য চালু নেই