সঙ্কটে দেশীয় কাগজ শিল্প

অসাধু উপায়ে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানী আর নিম্ন মানের কাগজে দেশের বাজার ভরে যাওয়া বিপুল পরিমাণ পুঁজি আর কর্মসংস্থান নিয়ে বিপাকে পড়ছে দেশীয় কাগজ শিল্প। এছাড়া এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি দেশ থেকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও চলে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, মিথ্যা ঘোষণায় আনা কোনো কাগজ যাতে শুল্ক বিভাগ খালাস না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এরপর রাজস্ব বোর্ড তার শুল্ক স্টেশনগুলোয় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায়। তবু কাগজ আনা কমছে না বলে জানা যায়।

অন্যদিকে শুল্ক সুবিধায় কাগজ আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করছে অসংখ্য অসাধু ব্যক্তি। ঢাকার কাগজের পাইকারি বাজারগুলোয় প্রকাশ্যে এসব কাগজ বিক্রির চিত্র দেখা যায়। কিন্তু নেই প্রতিরোধমূলক কোনো উদ্যোগ।

২০১০ সালের এপ্রিল থেকে পরের বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ২১ মাসে মিথ্যা ঘোষণায় আনা কাগজ খালাসের সময় ৭১টি চালান আটক করেন চট্টগ্রামের শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। চালানগুলোয় কাগজের পরিমাণ ছিল ৭৫০ টনেরও বেশি। মূলত আর্ট পেপার ও ইসিজি পেপারের নামে এসব পাতলা ও সাদা কাগজ আমদানি হচ্ছিল। এর পর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এ ধরনের কাগজ আমদানি।

কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের তথ্য মতে, ২০০৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের এক আদেশ অনুযায়ী, বন্ডের আওতায় ৩০০ জিএসএমের নিচের আর্ট কার্ড আমদানিযোগ্য নয়। এর পরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ কাগজ আমদানি করে যাচ্ছে। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০০৯ থেকে ২০১২ অর্থবছর পর্যন্ত শুল্ক ফাঁকিবাজচক্রের অন্তত তিন হাজার চালানে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার পণ্য খালাসের চেষ্টা নস্যাৎ হয়। এর মধ্যে কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন ও রিসার্চ (এআইআর) শাখা রাজস্ব ফাঁকিসংক্রান্ত ছয় শতাধিক মামলা করে।

রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধপত্র এনবিআর পেয়েছে। একই সঙ্গে কেউ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কোনো পণ্য আমদানি করলে তা যাতে খালাস করা না হয়, সেজন্য শুল্ক স্টেশনগুলোয় কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যে মানের পণ্য আনার কথা, সে মানের পণ্য আমদানি করা হয়েছে কিনা, তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে ৫ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে লেখা ও মুদ্রণের নিম্নমানের কাগজ এবং নিউজপ্রিন্ট আমদানি হচ্ছে। এ দুটি পণ্য খালাসকালে বিএসটিআই ও বিডিএস মান পরীক্ষা করার বিধান আমদানিনীতি আদেশে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দরে বন্ডেড বোর্ড এবং ইসিজি পেপারের ঘোষণায় তিন সহস্রাধিক চালানের বিপরীতে আনা বিপুল পরিমাণ সাদা কাগজ আটক হয়েছে। একই সময়সীমায় আরও অন্তত ১০ গুণ বেশি কাগজ শুল্ককর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনায়াসে দেশে ঢুকে পড়ে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের গড়ে তোলা হাজার কোটি টাকার কাগজ শিল্প।



মন্তব্য চালু নেই