সংবিধানের সাংঘর্ষিক অনুচ্ছেদ সরিয়ে ফেলার আহ্বান
সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনুচ্ছেদগুলোকে সরিয়ে ফেলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
তিনি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত ১১৬ ও ১১৬(ক) অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এগুলো সংবিধান থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় পূর্ণাঙ্গ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারের আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এর আগে বিচার বিভাগ পৃথককরণের নবম বার্ষিকীতে দেওয়া বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটাকে দ্বৈত শাসন উল্লেখ করে বলেছিলেন, ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে তিনি আজ বলেন, ‘আমি কোনো এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম এদেশে দ্বৈত শাসন চলছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রী বললেন যে চলে না। প্রধান বিচারপতি হিসেবে আইনের অভিভাবক, সংবিধানের অভিভাবক হয়ে বলছি, এটা যদি না হয় তাহলে আজকে বিচারকদের ডিসিপ্লিন রুলস কে করবে? সরকার করবে না আমরা বিচারকরা করব? তাদের কন্ট্রোল, বদলি কোনো কিছুই আমরা করতে পারছি না। তাই এই অসাংবিধানিক প্রভিশনগুলো তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়া হবে বলে আমি আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধানের অসাংবিধানিক প্রভিশনগুলো বাতিল করেছি। কিন্তু আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি, বর্তমানে সংবিধানে যে ১১৬ এবং ১১৬ (ক) যথাক্রমে চতুর্থ এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১১৬ এবং ১১৬ (ক) সন্নিবেশন করা হয়েছে। এ দুই বিধান থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু যে ১১৬ রাখার বিধান করেছিলেন, ইনডিপেনডেন্ট অব জুডিশিয়ারি এবং রুল অব ল বলতে আইনের শাসন বলতে কি রকম করতে হবে এটাকে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। আমরা পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনী, ত্রয়োদশ সংশোধনী ও ষোড়শ সংশোধনী প্রত্যেকটা সংশোধনী বাতিল করেছি। পার্লামেন্টের আইন করার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে পার্লামেন্ট সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের সংশোধন করতে পারবে। এমনকি সংবিধানকে বন্ধ করে দিতে পারবে। আজকে যদি সরকার বলে দেয় সুপ্রিম কোর্ট থাকবে না আমাদের কিছুই করার থাকবে না। পার্লামেন্টের এই ক্ষমতা আছে। সংবিধানের মেইন পিলার যেটা আমরা পঞ্চম সংশোধনী, ষষ্ঠ সংশোধনীসহ সবগুলো আমরা বাতিল করেছি, বেসিক স্ট্রাকচার অব দি কনস্টিটিউশন চেইঞ্জ করে কোনো সংবিধান বা কোনো আইন করতে পারবে না।’
তিনি আরো বলেন, কোনো শক্তি যখনই সংবিধানকে বাঁকা পথে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, সুপ্রিম কোর্ট সেই বাঁকা পথ থেকে সংবিধানকে সোজা পথে নিয়ে এসেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এছাড়াও সাবেক প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টে উভয় বিভাগের বিচারপতিসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই