ষড়যন্ত্রের কাছে হারল টাইগাররা?

কথা ছিল- কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু আজ কার বিরুদ্ধে খেলল টাইগাররা? ধোনি, কোহলি, সামিদের বিরুদ্ধে নাকি বিসিসিআই ও আইসিসির বিরুদ্ধে? মনে সন্দেহ জাগে- বাংলাদেশ কি হেরেছে, নাকি পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে?

খাতা-কলমে ভারত শক্তিশালী দল, সন্দেহ নেই। চলতি বিশ্বকাপে একটি ম্যাচেও হারেনি। তবে দলটি বাংলাদেশকে যথেষ্ট সমীহ করেছে। কারণ, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে সুপার এইটে বাংলাদেশের কাছে হেরেই নকআউট পর্ব থেকে ছিটকে পড়েছিল ভারত । সেরকম পরাজয়ের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেজন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। প্রথমেই অনেক ভারতীয় নানারকম উল্টা-পাল্টা কথা বলে বাংলাদেশ দলকে মানসিকভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঘেরা জানে কীভাবে লড়াই করে জিততে হয়।

জয় নিশ্চিত করতে ভারত কি ষড়যন্ত্রের জাল পেতে রেখেছিল? খেলায় ভুল সিদ্ধান্তের ছড়াছড়ি তো সেরকমই ইঙ্গিত দেয়। ১১ জনের বাংলাদেশ দলকে খেলতে হলো ১৪ জনের বিরুদ্ধে। ভারতীয় দলের ১১ ক্রিকেটারের সঙ্গে তাদের হয়ে খেলেছেন মাঠের আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড, আলিম দার আর টিভি আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করেছেন মাঠের বিচারকরা। ‘বিচারপতি তোমার কাছে বিচার না পেলে/কোথায় বিচার পাব আমি কার কাছে গেলে?- এই গান গাওয়া ছাড়া আর কী-বা করার আছে মাশরাফিদের।

এবার দেখা যাক আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের নজিরগুলো। ৩৪তম ওভারে মাশরাফির বলে পরিস্কার এলবিডব্লিউ রায়না। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডের কাছে জোরালো আবেদন করেন। কিন্তু আঙুল ওঠেনি ইংলিশ আম্পায়ারের। এরপর থার্ড আম্পায়ারের কাছে রিভিউ নেন মাশরাফি। স্টিভ ডেভিস বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। কিন্তু সুবিচার পেলেন না টাইগাররা।

এলবিডব্লিউর ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, বল লেগ স্ট্যাম্পের লাইনের বাইরে ফেলা যাবে না। মাশরাফির করা বলটি যদি বাইরে পড়ত তাহলে প্রথম দফায়ই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হতো। বলটি লেগ স্ট্যাম্পের একেবারে বাইরে ছিল না। তারপরও সিদ্ধান্তটি গেল ভারতের পক্ষে! বিতর্কের জন্ম দিলেন বিতর্কিত ইংলিশ আম্পায়ার।

ষড়যন্ত্র এখানেই শেষ হয়নি। ইনিংসের ৪০তম ওভারে রুবেলের বলে আম্পায়ারের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে আউট হয়েও বেঁচে যান রোহিত শর্মা! তখন রোহিতের সংগ্রহ ছিল ৯০ রান। রুবেলের ফুলটস বলে ডিপে ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। কিন্তু হাইটের কারণে তা নো বল দেন ইংল্যান্ডের আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড। এখানে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারেরও হাত আছে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি মোটেই নো ছিল না! এমনকি কোমরের থেকেও নিচে ছিল। আম্পায়ারের কল্যাণে নতুন জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি করেন রোহিত। বাংলাদেশকে ঠেলে দেওয়া হলো অন্ধকারে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের সময়ও দেওয়া হলো ভুল সিদ্ধান্ত। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহর ছয়ের মারকে ক্যাচ বলে রায় দিলেন ইয়ান গোল্ড।

যারা ক্রিকেটের ন্যুনতম খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন- একটা ভুল সিদ্ধান্তই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। রোহিত শর্মা আউট হলে তাদের দলীয় সংগ্রহ নিশ্চয়ই ৩০০ হতো না। কারণ, রোহিত শর্মা লাইফ পেয়ে আরো ৪৭ রান করেন। রোহিত আউট হলে তার জায়গায় অন্য ব্যাটসম্যান আসতেন। নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসে সেট হতে কয়েকটি বল চলে যেত। এতে তাদের টোটাল স্কোর কম হতো। অন্যদিকে রায়নার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়ে তাকে আরো ৩০ রান করার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রে হলো উল্টো। তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের মৃত্যু ঘটানো হলো অকালেই।

এসব ভুল সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন খোদ ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও। খ্যাতিমান ভারতীয় ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষণ, অজিত অগারকারও স্বীকার করেছেন যে, আম্পায়াররা বাংলাদেশের প্রতি অবিচার করেছেন। সমালোচনা করেছেন, কিংবদন্তী খেলোয়াড় শেন ওয়ার্ন, মার্টিন ক্রো। পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের সমালোচনা করেছেন তার স্বদেশি শোয়েব আক্তার।

প্রশ্ন হলো- আইসিসি কেন ভারতকে জিতিয়ে দিতে চায়? কারণ, আইসিসিকে সবচেয়ে বেশি টাকা দেয় বিসিসিআই। আইসিসির আয়ের প্রধান উৎস ভারত। ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলে এতগুলো দর্শককে হারাতে হবে। তাছাড়া বিশ্বকাপ সম্প্রচারের টেলিভিশন স্বত্ব ভারতের। বিশ্বকাপের টাইটেল স্পন্সর ভারতের। তাই যে ভাবেই হোক ভারতকে যতদিন টুর্নামেন্টে রাখা যায় ততই লাভ। তাহলে টাকার কাছেই কি বিক্রি হলো ক্রিকেট!

এছাড়া বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। যেমন ১৯৯৬-এ সেমিফাইনালে পিচ কারসাজি করে নিজের ফাঁদে কুপোকাত হওয়া। ৯৯-এ কেনিয়া সেমিতে চলে যায়, তাকিয়ে দেখে হা হুতাশ করে ভারত। ২০০৩-এ ফাইনালে টসে জিতেও ভুল সিদ্ধান্তে ধোলাই খাওয়া। ২০০৭-এ বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ রাউন্ড থেকেই বিদায়।

তাই, গতবার অর্জিত চ্যাম্পিয়নের তকমা টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে খেলার পাশাপাশি মাঠের বাইরেও খেলেছে তারা। হাত করেছে আইসিসিকে। আর আম্পায়াররা তো আইসিসির চাওয়ার বাইরে যেতে পারেন না, তাই না?

লেখক : সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।



মন্তব্য চালু নেই