শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় স্বচ্ছতা বাড়ান
শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য জার্মানির পোশাক ও জুতা ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলেছে, কোন কোন কারখানা তাদের পণ্য সরবরাহ করে থাকে, সেসবের তালিকা প্রকাশ করে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জার্মান ব্র্যান্ডগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।
কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও শ্রম অধিকারের দিকগুলো তুলে ধরে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই আহ্বান জানায় এইচআরডব্লিউ।
‘জার্মানি : ক্লোথিং ব্র্যান্ডস শ্যুড ইনক্রিজ ট্রান্সপ্যারেন্সি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, পোশাক সরবরাহকারী কারখানার তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে সাপ্লাই চেনের স্বচ্ছতা তৈরি হয়। আর এতে করে ব্র্যান্ডগুলো যে শ্রমিকদের জন্য কাজের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেটাও প্রতীয়মান হয়।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে সংস্থাটির জার্মানির পরিচালক ভেনজেল মিচালস্কিকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। মিচালস্কি বলেছেন, ‘শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত জার্মানির পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর। এ জন্য তাদের উচিত বিশ্বব্যাপী তাদের সাপ্লাই চেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।’
মিচালস্কি অবশ্য উল্লেখ করেন, ‘জার্মানির অন্যতম বড় ব্র্যান্ড এ্যাডিডাস ২০০৭ সাল থেকে পণ্য সরবরাহকারীদের তালিকা প্রকাশ করে আসছে।’
মিচালস্কি বলেন, ‘স্বচ্ছতা তৈরী যে অসম্ভব নয় এবং দরকারিও বটে— দুটোই প্রমাণ করেছে (এ্যাডিডাস)।’
অস্বচ্ছতার উদাহরণ বাংলাদেশ
জার্মানির একটি পোশাক ব্র্যান্ডের অস্বচ্ছতা তুলে ধরতে প্রতিবেদনে বাংলাদেশী পোশাক কারখানার দুটো দুর্ঘটনার উদাহরণ টানা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকায় রানা প্লাজা ধসের ঘটনা স্বচ্ছতা ঘাটতিরই একটা অকাট্য প্রমাণ। রানা প্লাজা ধসে অন্তত এগারশ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল, আহত হয়েছিলেন কয়েক হাজার।
এইচআরডব্লিউ বলছে, রানা প্লাজায় ওরকম একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে কেন টের পাওয়া যায়নি—এই প্রশ্নের উত্তর হলো সাপ্লাই চেনের অস্বচ্ছতা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শ্রমিক সংঘ ও শ্রমিক অধিকার কর্মীরা দাবি করেছিলেন, রানা প্লাজায় পোশাক তৈরি করত জার্মানির ব্র্যান্ড কেআইকে। যদিও গত বছর ২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে কেআইকে দাবি করে, রানা প্লাজায় ব্র্যান্ডটির সরাসরি কোনো ব্যবসায়িক যোগসাজশ ছিল না। যদিও পরে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গঠিত তহবিলে অর্থ-অনুদান দিয়েছিল কেআইকে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশী আরেক পোশাক কারখানা তাজরিনের অগ্নিকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে ওই দুর্ঘটনায় ১১৭ শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। তাজরিনে তৈরি পোশাক কেআইকে কিনত বলেও তখন শ্রমিক সংঘগুলো দাবি করেছিল। এটা অব্যশ স্বীকার করেছিল জার্মান ব্র্যান্ডটি। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তাজরিনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় অনুদান দিয়েছিল কেআইকে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের করাচিতে এক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২৬২ শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। তখনও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবার কেআইকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল, ব্র্যান্ডটির বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিল।
এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পর মিচালস্কিকে আবারও উদ্ধৃত করা হয়। যেখানে মিচালস্কি বলছেন, ‘কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ যে নিরাপদ, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় জার্মান ব্র্যান্ডগুলোর উচিত এই বিষয়টি নিশ্চিত করা।’
মিচালস্কি আরও বলেন, ‘জার্মান ক্রেতাদের উচিত হবে এই প্রশ্ন তোলা—তারা যে ব্র্যান্ডের পোশাক কিনছেন সেই ব্র্যান্ডের পোশাকগুলো কোথায় তৈরি হয় এবং ঠিক কী রকম পরিবেশে।’ মিচালস্কি মনে করেন, তবেই শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।
মন্তব্য চালু নেই