শ্রদ্ধাবনত জাতি স্মরণ করছে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শ্রদ্ধাবনত জাতি স্মরণ করছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

বুধবার ভোর থেকে জনতার ঢল নেমেছে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ আর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ।

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান/ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর পঙ্ক্তির চেতনায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে আজ উজ্জীবিত জাতি।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি জাতি যখন আসন্ন বিজয়ের আনন্দে উন্মুখ, ঠিক তখন দখলদার পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার, আলশামস-ঘাতকরা রাতের অন্ধকারে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে। তারা হত্যা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। অবশ্য চার দশক পর হলেও সেই ঘাতকদের ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে তারা। অনেকের লাশই পাওয়া যায়নি। এভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন চক্রান্তে মেতে ওঠে নির্মম ঘাতক-দালালরা।

দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নিজ কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রভূত প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। মুক্তিকামী জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। হানাদাররা সেদিন কেবল ঢাকাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী, পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় দেড়শ’ বুদ্ধিজীবী-কৃতীসন্তানকে অপহরণ করে মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন।

এ শোকাবহ দিনটি চার দশকের বেশি সময় কেটেছে হত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপে। কিন্তু প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। ঘাতক-দালালদের বিচারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মিরপুরের কসাইখ্যাত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, নরঘাতক কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ, চিত্রপ্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এছড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও এফএম রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলোতেও বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই