পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন: শ্যামল কান্তি ও সেলিম ওসমান ঘটনার শিকার
নারায়ণগঞ্জে স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় হওয়া সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে ঘটনার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়ী করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, শ্যামলকান্তি ও সেলিম ওসমান উভয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির শিকার।
আজ রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার দিন পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা ছিল আকস্মিক। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ও স্থানীয় সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান উভয়ই উদ্ভূত পরিস্থিতির শিকার।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘যেহেতু ঘটনাটি আকস্মিক এবং শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ও সাংসদ সেলিম ওসমান উভয়ই ঘটনার শিকার, সেহেতু কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাহারও কোনোরূপ অভিযোগ নাই। কেউ কোনোরূপ জবানবন্দিও দেননি। তাই এ বিষয়ে কাহারও বিরুদ্ধে কোনোরূপ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।’
অপরদিকে রিটের পক্ষের আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, পুলিশের দাখিল করা এ প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রতিবেদনের বিষয়ে আদালত প্রশ্ন রেখে বলেছেন, গণমাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা এসেছে। এটা কে বা কারা ঘটিয়েছে ও মাস্টারমাইন্ডে কারা ছিল তদন্তে তা আনতে হবে।
এর আগে গত ৩ আগস্ট প্রতিবেদনটি নারায়ণগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেওয়ার পর তা নথিভুক্ত হয়। এরপর সেটি হাইকোর্টে আসে।
গত ১৪ মে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে মারধর করা হয়। এতে তিনি আহত হন। পরে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়।
এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৮ মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের জানানোর নির্দেশও দেন।
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশিদ পত্রিকায় প্রকাশিত শিক্ষকের কান ধরে উঠবস করার ঘটনায় প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করেন।
রুলের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জুন প্রশাসন প্রতিবেদন জমা দিলেও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রতিবেদন জমা দিতে দুই মাস সময় চান। সময় আবেদনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত করছে। এ অবস্থায় নতুন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব নয়।
আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ৪ আগস্ট পুলিশকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। আর এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৭ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আজ জিডির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলো।
মন্তব্য চালু নেই