প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কি কি চুক্তি হচ্ছে?

দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার পর ৭-১০ এপ্রিল ভারত সফরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার এই সফর দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ান আঞ্চলিক রাজনীতি, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে আসছে।

এই সফরে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করবেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনা করবেন তিনি।

‘বে অব বেঙ্গলে’ কৌশলগতভাবে কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব জরুরি ভারতের। ইতোমধ্যে চীন এই উপকূলে অবস্থান করার সুযোগ খুঁজছে। চীন-বাংলাদেশ সামরিক সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে দুই দেশের নৌ-সম্পর্ক। ২০১০ সাল থেকে চীন ঢাকাতে ৫টি মেরিটাইম পেট্রল ভেসেল, দুইটি করোভেট, অ্যান্টি-শিপ মিসাইল সরবরাহ করেছে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে এটি বাংলাদেশের কাছে দুইটি সাবমেরিন সরবরাহ করে। ২০৩ মিলিয়ন ডলারের এই সাবমেরিন বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের সম্পর্ককে ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক’ বলে অভিহিত করেন।

‘বে অব বেঙ্গলে’ নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ বজায় রাখার জন্য ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছে। এর সূত্র ধরে নভেম্বরে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পরিকর বাংলাদেশ সফর করেন এবং সামরিক সহায়তা চুক্তির প্রস্তাব দেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের কথা জানান। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.জয়শঙ্কর ঢাকা সফর করে ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাংলাদেশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।

এই দুই সফরের সূত্র ধরে, শেখ হাসিনার আসন্ন সফরে ভারত এবং বাংলাদেশ সামরিক ইস্যুতে দুইটি চুক্তি এবং ৭ টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার বিষয়ে একমত হয়। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী এবং ভারতের নৌ-বাহিনীর জন্য ‘সামরিক সহযোগিতা চুক্তি’ একটি কৌশলগত চুক্তি। সাতটি সমঝোতা স্মারকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা এবং কৌশলগত অবস্থান’এর বিষয় দুই দেশ স্বাক্ষর করবে। ৩০ ও ৩১ মার্চ ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বাংলাদেশ সফর করবেন। এটিকে সাধারণ সফর বলে বিবেচনা করা হলেও এই সফরে ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যাপক সামরিক চুক্তি’র বিষয়ে ভারতের আগ্রহ প্রাধান্য পাবে।

ইন্দো-বাংলাদেশ চুক্তির বিরোধীতাকারীরা বলছেন এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশকে আয়ত্বে নিতে চাইছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশ ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করলে বাংলাদেশের সামরিক ব্যবস্থায় ভারতের সম্প্রসারণ ঘটবে।

শেখ হাসিনার ভারত সফরে দ্বিতীয় ইস্যু তিস্তা চুক্তি। ভারত এই চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা সরকারের জন্য তিস্তা চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

যোগ-বিয়োগ করলে দেখা যায় কৌশলগত ভাবে ভারত সরকারের জন্য শেখ হাসিনা সরকার অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সরকার তিস্তার ৫০ ভাগ পানি বাংলাদেশে সরবরাহের ব্যাপারে একমত পোষণ করলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বাধার মুখে এই চুক্তি আটকে যায়। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে প্রতি সেকেন্ডে ৩৩ হাজার কিউবিক ফুট পানি সরবরাহ করলে এটি তার রাজ্যের কৃষিখাতে আঘাত হানবে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন সিংহা বলেন, কাজ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। কি সম্ভব আর কি সম্ভব না অচিরেই দেখা যাবে।

তবে সব কিছু বাদ দিয়ে বলা যায়, শেখ হাসিনার এই সফরে দুই দেশের নেতার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নমনীয়তা পরীক্ষা হবে। নিজ স্বার্থ রক্ষা, একের সঙ্গে অন্যের স্বার্থের বোঝাপড়াই সফরের মূল বিষয়।

লেখক: অমিত রঞ্জন, সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিভাগের গবেষক।

অনুবাদ: লিহান লিমা



মন্তব্য চালু নেই