শেকসপিয়র সম্বন্ধে ১০ রহস্যময় তথ্য
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল ছিল ইংরেজ কবি ও নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়রের ৪শ তম মৃত্যুবার্ষিকী। জগত বিখ্যাত এই কবি ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল ৫২ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের মজ্জায় মজ্জায় মিশে রয়েছে তার নাম। তিনি তার জীবদ্দশায় যতটা না জনপ্রিয় ছিলেন, মৃত্যুর পর থেকে সময় যতই বাড়ছে মানুষের মাঝে তার প্রভাব ততই বাড়ছে। তবে বেশিরভাগ মানুষ তার কথা জেনেছে মুখে মুখে শুনে কিংবা তার লেখা পড়ে। যে কারণে ব্যক্তি শেকসপিয়র সম্বন্ধে অনেক তথ্যই অজানা ও রহস্যময় রয়ে গেছে।
যেমন অনেকেই জানেন না শেকসপিয়র তার জীবনে দুইবার দীর্ঘ সময়ের জন্য উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। কিংবা যেমন কেউ নিশ্চিত করে জানেন না তার জন্ম আসলে কবে হয়েছিল। অথবা যে নামে আজকে সবাই আমরা তাকে ডাকি, তিনি নিজে কখনো সেই নামে স্বাক্ষর করেননি। তার সম্বন্ধে এরকম ১০টি অজানা রহস্যময় তথ্য নিচে তুলে ধরা হল :
কেউ জানে না শেকসপিয়রের জন্মদিন কবে : শেকসপিয়রের জন্মদিনের কোন প্রকৃত রেকর্ড কারো কাছে নেই। তবে ১৫৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল ছিল তার খ্রিস্টীয়করণের দিন। তখনকার সময়ে জন্মের কয়েকদিন পরেই শিশুদের খ্রিস্টীয়করণ বা ব্যাপটাইজড করা হত। যে কারণে ধারণা করা হয়, তার জন্মদিন ছিল ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল। এতে করে তার জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন আসলে বছরের একই দিন।
তিনি বিয়ে করেছিলেন খুবই কম বয়সে : তিনি যখন অ্যান হ্যাথওয়েকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। অথচ অ্যানের বয়স ছিল তার থেকে ৮ বছর বেশি। তখনকার দিনে নিজের চেয়ে বেশি বয়স্ক কাউকে বিয়ে করাটা বিতর্কিত হওয়ার কথা, তার উপর বিয়ের সময় অ্যান ছিলেন গর্ভবতী। তাদের প্রথম সন্তান সুজানার জন্ম হয়েছিল তাদের বিয়ের ৬ মাসের মাথায়।
তার এক সন্তান মারা গিয়েছিল : প্রথম সন্তান সুজানার জন্মের পরে ১৫৮৫ সালে অ্যান হ্যাথওয়ে জুডিথ এবং হ্যামনেট নামের যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ১৫৯৬ সালের আগস্ট মাসে মাত্র ১১ বছর বয়সে হ্যামনেট মারা যায়।
শেকসপিয়রের বংশধরের কেউ এখন জীবিত নেই : শেকসপিয়রের প্রথম কন্যা সন্তান সুজানা ১৬০৮ সালে একটাই কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এলিজাবেথ নামে। এলিজাবেথ বড় হয়ে দুইবার বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু একবারও কোন সন্তান জন্ম দেন নি। শেকসপিয়রের আরেক কন্যা জুডিথ তিন পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই বিয়ে করার আগেই মারা পড়েন। শেকসপিয়র বার্থপ্লেস ট্রাস্টের দেয়া তথ্য মতে, তার কোন সরাসরি উত্তরসূরি নেই, তবে তার বোন জোয়ানের সন্তানরা হয়তো জীবিত আছেন।
হারানো বছর : যে দুইবার তিনি নিরুদ্ধেশ হয়েছিলেন, কেউ জানে না তিনি আসলে ঠিক কি করেছেন এই সময়টায়। প্রথমবার ১৫৭৮ সাল থেকে ১৫৮২ সাল পর্যন্ত, দ্বিতীয়বার ১৫৮৫ সাল থেকে ১৫৯২ সাল পর্যন্ত নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এর উপরে অনেকে অনেক তত্ত্ব দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন ঐ সময়ে তিনি ছিলেন স্কুল শিক্ষক, কশাই, উকিলের মুহুরি, সেনা সদস্য ইত্যাদি। তবে এসব দাবির কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তার বাবা ছিলেন বিয়ারের পরীক্ষক : শেকসপিয়রের বাবার নাম জন শেকসপিয়র, মায়ের না ম্যারি আর্ডেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের অষ্টম সন্তান। তার বাবা কৃষিকাজ, হাতমোজা বা দস্তানা বিক্রি, চামড়ার ব্যবসা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের কাজ করেছেন। তবে তিনি নাকি মদের দোকানে বিয়ার টেস্টারের কাজও করেছেন। বিয়ারের স্বাদ নিয়ে তিনি এগুলোকে পরীক্ষা করতেন।
তার পরিবারের বেশিরভাগই ছিলেন অশিক্ষিত : ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে শেকসপিয়রের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ তার পরিবারের বেশিরভাগ মানুষই ছিলেন অশিক্ষিত। তখনকার দিনে বেশিরভাগই তাই ছিলেন। তার বাবা মাও লেখাপড়া জানতেন না, এমনকি তার স্ত্রী সন্তানরাও লেখা এবং পড়া কোনটাই জানতেন না।
প্রাত্যহিক বুলি : শেক্সপিয়ার ইংরেজি ভাষায় তিন হাজার নতুন শব্দের প্রচলন করেন। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাত্যহিক ব্যবহৃত বুলি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তার মৃত্যুর ৪০০ বছর পরেও সেই সব বুলি মানুষের মুখে মুখে ফিরছে এখনো। ব্রিটিশ কাউন্সিল জানিয়েছে, শেকসপিয়র না জন্মালে ‘হার্ট অব গোল্ড’, ‘ওয়াইল্ড গুজ চেজ’, ‘ব্রেক দ্যা আইস’ কিংবা ‘লাভ ইজ ব্লাইণ্ড’ ইত্যাদি বুলি তারা বলতেন না। কারণ এ সবই তার সৃষ্টি করা।
ভালো ব্যবসায়ী : শেকসপিয়র তার জীবদ্দশায় ৩৭টি নাটক লিখেছেন। কিন্তু সেই সাথে তিনি একজন ভালো ব্যবসায়ীও ছিলেন। এটা করে তিনি কিছু বিষয় সম্পত্তি করেছিলেন। এর মধ্যে তার জন্মস্থান স্ট্রেটফোর্ড-আপন-অ্যাভানে আবাদি জমি সহকারে নিউ প্যালেস নামের একটি কটেজ। তাছাড়া গ্লোব থিয়েটার এবং ব্ল্যাকফ্রায়ার থিয়েটারে তার কিছু শেয়ারও ছিল।
তার নাম হয়তো আমার ভুলভাবে বলি : শেকসপিয়রের নাম একেক রেকর্ডে একেক রকমভাবে পাওয়া যায়। তার এখনকার যে নামটা আমরা ব্যবহার করি সেটা ছাড়াও রেকর্ডে দেখা যায় তার নাম ছিল ‘শেপিয়ার’ এবং ‘শ্যাকসবার্ড’। হিস্টোরি ডট কম এর তথ্য মতে, এখন তার যে নামটা আমরা ব্যবহার করি শেকসপিয়র নিজে কখনো সেটা লিখে স্বাক্ষর করেননি কোথাও।
মন্তব্য চালু নেই