শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে পরিপূরক খাবারের গুরুত্ব

সুস্থ জাতি গঠনে চাই সুস্থ সবল শিশু। শৈশবে স্বাস্থ্যের যত্ন নিলে পরিণত বয়সে তার ফল পাওয়া যায়। শিশুর জন্মের সময় যে ওজন থাকে, ৫ মাস বয়সে হয় দ্বিগুন, ১ বছরে তিনগুন এবং ২ বছরে চারগুন হওয়া বাঞ্চনীয়। শিশুর স্বাস্থ্য বৃদ্ধির এই নিয়মকে ঠিক রাখতে ৪ থেকে ৬ মাস বয়সে মায়ের দুধের পাশাপাশি অতিরিক্ত খাবারের দরকার হয়। অতিরিক্ত এই খাবারকে পরিপূরক বলে। এতে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং পুষ্টিহীনতা থেকেও রক্ষা করে।

আমাদের দেশে প্রতি বছর ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮ লাখ শিশু অকালে মারা যায়। এর অন্যতম কারণ পুষ্টির অভাবজনিত কয়েকটি মারাত্মক রোগ। যেমন কোয়াশিয়রকর, ম্যারাসমাস, গলগণ্ড, রাতকানা ইত্যাদি। প্রধানত শর্করা ও আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবেই কোয়াশিয়রকর বা শরীর ফোলা রোগ হয়। শিশু যখন মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয় তখনই এই রোগ বেশি হয়। এতে শরীরে পানি আসে তাই শরীর ফুলে যায়। এ রোগে দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। শিশুর মেজাজ খিটখিটে থাকে। এক থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চাদের মধ্যেই এ রোগ বেশি দেখা যায়। এসব রোগ দমনে খাদ্য তালিকায় প্রচুর আমিষ জাতীয় খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি এবং শর্করা জাতীয় ভাত, রুটি, আলু, চিনি, গুড় থাকা দরকার। শরীর ফোলা রোগে পেটের পীড়া, রক্তস্বল্পতা, যকৃতের বৃদ্ধি এবং ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে শিশুকে সম্ভব হলে হাসপাতালে ভর্তি করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়।

শিশুর খাদ্যে প্রয়োজনীয় ক্যালরির অভাবে ম্যারাসমাস রোগ হয়। অকালে মায়ের দুধ পান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রধানত ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এ রোগটি দেখা যায়। এতে শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পেশীগুলো খুবই দুর্বল হয়ে যায় এবং চামড়া কুঁচকে যায়। মুখের হাড় ও পাঁজরের হাড় উচু হয়ে ওঠে। এসময় শিশুর ক্ষুধা বেশি থাকায় খাবারের প্রতি প্রচুর আগ্রহ থাকে। এ রোগে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতিতে হতে পারে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগও হয়। শিশুকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ এর যোগান বাড়াতে মাখন, মাছের তেল, কলিজা, ছোট মাছ, সবুজ ও হলুদ বা অন্যান্য রঙিন শাকসবজি তথা গাজর, টমেটো, বিট, মিষ্টি কুমড়া, কচুশাক, লাউশাক, পাকা পেঁপে, আম প্রভৃতি খাওয়ানো দরকার।



মন্তব্য চালু নেই