শিশুর বুদ্ধি আসে মায়ের কাছ থেকে : গবেষণা তথ্য

শিশু কতটা বুদ্ধিদীপ্ত হবে তা নির্ভর করে তার মায়ের বুদ্ধিমত্তার ওপর। এক্ষেত্রে বাবার বুদ্ধিমত্তা কোনো ভূমিকাই রাখে না। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ওই গবেষণা অনুসারে, মানবদেহের ‘এক্স’ ক্রোমোজোমের মাঝেই থাকে বুদ্ধিমত্তার জিন। ভ্রুণ গঠনের সময় নারীদেহের ‘এক্স’ ও ‘এক্স’ ক্রোমোজোম থেকে একটি এবং পুরুষের দেহের ‘এক্স’ ও ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম থেকে একটি করে মোট দু’টি ক্রোমোজোম নেয়া হয়। যেহেতু এক্স ক্রোমোজোম নারীদেহে দু’টো করে এবং পুরুষের মাঝে একটি করে থাকে, সেহেতু বাবার তুলনায় মায়ের কাছ থেকে সন্তানের মাঝে বুদ্ধিমত্তা যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।

এক্ষেত্রে মায়ের বুদ্ধি পাবার সম্ভাবনা বেশি তাকলেও বাবার কাছ থেকেও বুদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু নতুন গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, উন্নততর যে অবধারণগত বৈশিষ্ট্যগুলো বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তান পায় তা কাজে লাগে না; মানবদেহ থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেগুলোর কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়া হয়।

‘কন্ডিশনড জিন’ (conditioned genes) নামের এক ধরণের বিশেষ অবস্থাভিত্তিক জিনের শ্রেণী রয়েছে। এর কোনোটা শুধু মায়ের কাছ থেকে সন্তানের দেহে যোগ হলে সক্রিয় হয়। কোনোটা আবার কাজ করে যদি সেটা বাবার কাছ থেকে আসে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিশুর বুদ্ধিমত্তার কন্ডিশনড জিনগুলো শুধু মায়ের কাছ থেকে দেহে এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। নইলে নিষ্ক্রিয় থাকে।

গবেষণাগারে জিনগতভাবে উন্নত ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, বেশি পরিমাণে মায়ের জিন ঢুকিয়ে দেয়া ভ্রুণ থেকে বড় মাথা ও মস্তিষ্ক কিন্তু ছোট দেহের ইঁদুরের জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে বাবার জিন বেশি ঢুকানো ভ্রুণ থেকে জন্ম নেয়া ইঁদুরগুলোর মস্তিষ্ক ছোট এবং দেহ বড় হচ্ছে।

গবেষকরা দেখেন, ইঁদুরের মস্তিষ্কের ৬টি অংশ শুধু মা বা বাবার জিন রয়েছে। যৌনতা, ক্ষুধা, আগ্রসনসহ বিভিন্ন প্রবৃত্তি, মৌলিক আবেগ ও তাড়না আসে বাবার কন্ডিশনড জিন থেকে। অন্যদিকে মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স, যে অংশে যৌক্তিকতা, চিন্তা, ভাষা ও পরিকল্পনার মতো উন্নততর অবধারণগত কার্যকলাপ ঘটে, সেখানে বাবার কাছ থেকে আসা একটি জিনেরও উপস্থিতি নেই। সেখানে সবই মায়ের জিন।

মানুষের মাঝেও বিষয়টি যাচাই করতে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের শহর গ্লাসগোর বিজ্ঞানীরা ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সী ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে থাকেন। এভাবে মোট ১২ হাজার ৬৮৬ জনের পরীক্ষা নেন তারা।

শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্ণ, জাতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে করা ওই পরীক্ষায় দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের বুদ্ধি তাদের মায়ের বুদ্ধিমত্তা থেকে আসার সম্ভাব্যতাই সবচেয়ে বেশি।

তবে গবেষণায় এটাও বলা হয়েছে, জিনতত্ত্বই মানুষের বুদ্ধিমত্তার একমাত্র নির্ধারক নয়। এভাবে কেবল ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ এই উপায়ে গঠিত হয়। বাকি সমপরিমাণ বুদ্ধিমত্তা আসে পরিপার্শ্ব থেকে। অবশ্য এই পরিপার্শ্বের অংশ হিসেবে শিশুর বুদ্ধিমত্তা গঠনেও মায়েরাই বিরাট একটি ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করেছেন গ্লাসগোর বিজ্ঞানীরা।



মন্তব্য চালু নেই