জামায়াত কোনো দল নয়, এটি সন্ত্রাসী সংগঠন : শাহরিয়ার কবির

জামায়াতের মওদুদীবাদের উৎসাহে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। মওদুদীবাদের মতার্দশে আইএস, আল-কায়েদা, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ জঙ্গি সংগঠনগুলো পরিচালিত হচ্ছে। জামায়াত কোন গণতান্ত্রিক দল নয়। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি এটা একটা সন্ত্রাসী সংগঠন।

শনিবার ডব্লুভিএ মিলনায়াতনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বি-মৌলবাদীকরণ ব্যবস্থাপত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

তিনি বলেন, জামায়াতের নেতারা তালেবান ও আল-কায়দার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সে ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে নিজেদের সাচ্চা জিহাদি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তখন তাদের শ্লোগান হয়-আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান। শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করলেও সমাজ ও রাজনীতির বি-মৌলবাদীকরণের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দুই পাকিপ্রেমি জিয়া ও এরশাদের সাম্প্রদায়িক কলঙ্কচিহ্ন ‘বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ অপরিবর্তিত রয়েছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করে। যে কমিশন তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করে। অথচ জামায়ত-হেফাজত ও প্রশাসনে অবস্থানকারী পাকিমনা আমলাদের বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে বর্তমান সরকার উৎখাতের জন্য জামায়াত-বিএনপি ভিন্নমত-ভিন্নধর্ম-ভিন্নজীবন ধারার মানুষদের হত্যা করে আন্তর্জাতিক লবিষ্ট নিয়োগ করেছে। বিদেশে বলা হচ্ছে শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করছে।

তিনি বলেন, ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’ জামায়াত-বিএনপির সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক লবিষ্ট প্রতিষ্ঠান। ওয়াশিংটনে তা টের পেয়েছি। এখানে আমি মুখ্য আলোচক ছিলাম। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম মাইলাম তার বক্তব্যে বলেন (১) আমি যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার সম্পর্কে কিছু বলিনি। বাংলাদেশ সরকার এ বিচারের নামে বিরোধী দল জামায়াতকে ধ্বংস করতে চাইছে। (২) আমি জামায়াতকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের তাবৎ গডফাদার বলেছি। অথচ তিনি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসের সঙ্গে জামায়াতের কোনও প্রমাণ পাননি। (৩) জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী সরকারে ছিলেন। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি অথচ সরকার তাদের যুদ্ধাপরাধের নামে ফাঁসি দিয়েছে। (৪) তার মতে অন্য যেকোন দলের তুলনায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা সবচেয়ে বেশি করে জামায়াত। তারা নিয়মিত সম্মেলন করে, নেতৃত্ব নির্বাচন করে, যা অন্য দল করে না। (৫) আমি বাংলাদেশের মানুষের নৃতাত্বিক পরিচয় বাঙ্গালিত্বের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে ধর্মীয় পরিচয় অর্থাৎ একই সঙ্গে তারা যে মুসলমানও এটাকে অবমূল্যায়ন করেছি।

শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, গণতন্ত্র সম্পর্কে মাইলামের একটি বিষয় আমি একমত যে, এই দলটি নিয়মিত সম্মেলন করে নেতা নির্বাচন করে। তবে যে দলের প্রতিষ্ঠাতা মনে করেন গণতন্ত্র একটি কুফরি মতবাদ এবং নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদ হচ্ছে আদর্শ মতবাদ, যে দল গণতন্ত্রের মূলভিত্তি জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার পরিবর্তে আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, যে দল কোরআনকে রাষ্ট্রের সংবিধান মনে করে, যে দল নারী-পুরুষ এবং মুসলিম অমুসলিম সমান অধিকার ও মযার্দায় বিশ্বাস করে না, যে দল শিয়া ও আহমদীয়া মুসলিমদের অমুসলিম ঘোষণার জন্য আন্দোলন করে, যে দল ব্লাশ ফেমি আইন চালু করে ধর্মবিরোধীদের মৃত্যুদ-ের জন্য আন্দোলন করে, সে দল কিভাবে গণতান্ত্রিক হয় ?

তিনি বলেন, আমার বক্তব্যের পর সঞ্চালক মাইলামের কথা জানতে চান। মাইলাম কোন বক্তব্য দেয়নি। মাইলামের বক্তব্য আমাদের দেশে ‘প্রথম আলোর’ মতো পত্রিকাও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। বর্তমানে যিনি ওয়শিংটনে জামায়তের লবিষ্টের মতো কথাবার্তা বলছেন। আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, ইশফাক ইলাহী, নুজহাত চৌধুরী ও সাংবদিক ফারজানা লোপা প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই