শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারে আসছে কঠোর নির্দেশনা

মোবাইল ফোনে ক্রমেই আসক্ত হচ্ছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কম পয়সার অফার পেয়ে ‘পছন্দের’ কারও সঙ্গে রাতভর কথা বলছে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে একাডেমিক ফলাফলে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে নড়েচড়ে বসছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। মোবাইল ব্যবহারে এবার কঠোর নির্দেশনা আসছে মন্ত্রণালয়টির পক্ষ থেকে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে মতামত নিতে একটি আদেশও জারি করা হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, রাতভর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলে ছাত্র-ছাত্রীরা বিপথে যেতে বসেছে। ইন্টারনেটে মাধ্যমে আজে-বাজে ছবিও দেখছে তারা। বিষয়গুলো সরকারের নজর দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধসহ বাড়িতে এ ব্যাপারে দেখভাল করতে অভিভাবকদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারে করণীয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে মতামত চেয়েছে। তাদের বক্তব্য পাওয়ার পর এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হবে। গত একমাস আগে দেশের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে একটি সম্মেলন আয়োজন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এর আয়োজন করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারের বর্তমান চিত্র ও ভয়াবহতা তুলে ধরে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইদ্রিস আলী আজিজীসহ অন্য শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। জানতে চাইলে সেদিন কক্সবাজারের মহেশখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, মোবাইলের পাশাপাশি ফেসবুকেও আসক্তি বাড়ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। এগুলো শিক্ষার উপর বিরূপ ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

শিক্ষার্থীদের মোবাইলের ব্যবহারের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল বলেন, ইদানীং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মোবাইলের নেশা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজধানীর কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মোবাইলের অপব্যবহারের কারণে ছাত্ররা ইভটিজিং, বখাটেপনাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিমত দেন এ শিক্ষাবিদ। এ ইমেরিটাস অধ্যাপক আরও বলেন, মোবাইলের অপব্যবহার ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে তারা গভীর রাতে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে অভিভাবকদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলে মোবাইল নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়ে ভাবছেন কর্তাব্যক্তিরা। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে মোবাইল ব্যবহারের করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পরই নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ ঘোষণা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের উপকারিতা-অপকারিতা দুটিই রয়েছে। অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে মোবাইল হাতে দিয়ে স্বস্তি খুঁজে পায়। মোবাইল ব্যবহারে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষকদের সজাগ থাকতে হবে। -বিডি প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই