শিক্ষক লাঞ্ছনা: বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

আজ বুধবার পুলিশের প্রতিবেদন গ্রহণ না করে নতুন করে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাশের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, ‘পুলিশ এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পুলিশের তদন্তের প্রতিবেদন গ্রহণ করে নথিভুক্ত করার যে আদেশ দিয়েছেন, এতে আমরা মনে করি ওই হাকিম বিচারিক মনন (জুডিশিয়াল মাইন্ড) প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

আদেশে আদালত আরো বলেন,পুলিশের তদন্তকারী দল প্রকৃত সত্য ঘটনা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলো।

এর আগে গত ৭ আগস্ট হাইকোর্টে দাখিল করা ‍পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তেজিত জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনাটি আকস্মিকভাবে ঘটেছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দুজনই উদ্ভূত পরিস্থিতির শিকার। এতে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কান ধরে ওঠ-বস করানো ঘটনায় কেউ দায়ী নয় বলে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোকলেছুর রহমানের লিখিত জবানবন্দিতে শ্যামল কান্তি বলেন, কান ধরে ওঠ-বসের ঘটনা আকস্মিকভাবে ঘটেছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তান (ওসি, তদন্ত) দাখিল করা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ ঘটনায় শ্যামল কান্তি ভক্ত কাউকে দোষী করছেন না। এমনকি আদালত বা পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। ফলে এ ঘটনায় কারোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গত ১৩ মে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরই পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসিকে আদেশ দেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আজ এর ওপর আদেশ দেওয়া হলো।



মন্তব্য চালু নেই