শাহজালাল বিমানবন্দরে ‘ট্রাফিক জ্যাম’ নিরসনে সুপারিশ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পিক আওয়ারে উড়োজাহাজের উঠা-নামা বা এয়ার ট্রাফিক বেড়ে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত এয়ার ট্রাফিক সিস্টেমের কারণে বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং জনবল বৃদ্ধি করতে ও দেশীয়-আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোকে ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের ‘বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ১০ম বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। এতে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিমান বন্দরসমূহের লাগেজ হ্যান্ডলিং সমস্যা সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ, বাংলাদেশ বিমানের রোমের ফ্লাইট লাভজনক কিনা এবং তা বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রকল্পের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চলতি বছরের উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং পরবর্তী বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে লাগেজ হ্যান্ডলিং উন্নত করার নিমিত্তে বিমানের স্টেশন ট্রাফিকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং ইউনিট গঠন করা হয়েছে এবং ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বৈঠকের এজেন্ডা ছিল হযরত শাহজালাল আন্ত্ররজাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বিষয়ক আলোচনা হয়। এতে পিক আওয়ার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের ট্রাফিক বেড়ে যায়, যার ফলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি জানান, কমিটি সুপারিশ করেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পিক আওয়ারে উঠা-নামা করা বিমান সংস্থাগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে কর্মী নিয়োগেও সুপারিশ করেছে স্থায়ী কমিটি। যাতে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা যায়, মূলত দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোর নিজস্ব গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জনবল থাকলেও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা প্রদান করে বিমান। কিন্তু বিমানের জনবল পর্যাপ্ত না হওয়াতে ও পিক আওয়ারে উড়োজাহাজ উঠা-নামা বেড়ে যাওয়াতে এই পরিস্থিতির উপদ্রব হয়েছে।

বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের বিমানসংস্থা সমূহের সাথে বাংলাদেশ বিমানের ইন্টারলাইন বা স্পেশাল প্রোরেট এগ্রিমেন্ট-এর মাধ্যমে রোমের যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে ফারুক খান জানান, বৈঠকে বিমানের রোম ফ্লাইট অলাভজনক হওয়াতে তা বন্ধে পদেক্ষেপ নিতেও সুপারিশ করছে কমিটি। এছাড়া লাভজনক অভ্রন্তরীন রুটে ফ্লাইট চালু করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

ফারুক খান বলেন, ঈশ্বরদীতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নতুন করে শুরু ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দেশে উড়োজাহাজ শিল্প বিকাশে সংসদীয় কমিটির আগামী বৈঠকে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর মতামত নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, আগামী সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে ঢাকায় নতুন বিমানবন্দর প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যেই শাহজালালে চাপ বেড়ে গেছে, যা আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই আমরা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিষয়েও কমিটিতে আলোচনা করেছি।

বৈঠকে বিদেশি বিমানগুলোতে কমপক্ষে দুইজন বাংলাদেশ কেবিন ক্রু নিয়োগ এবং বেসরকারি বিমানগুলোর বাংলাদেশে কীভাবে চলাচল করছে সে বিষয়ে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে একটি রিপোর্ট প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা প্রতিটি বিদেশি বিমান সংস্থা যাতে বাংলাদেশ রুটে দুই জন বাংলাদেশী ক্রু ও বিনোদনের জন্য ২০ শতাংশ কনটেন্ট এবং বাংলাদেশি খাবার ফ্লাইটে সরবারহে ব্যবস্থা গ্রহণে সিভিল এভিয়েশনকে সুপারিশ করেছে কমিটি।

তিনি জানান, বিমানের নতুন রুট হিসেবে ঢাকা-গুয়ানজু-নারিতা রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচলে সম্ভাবতা যাচাইয়ের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

এছাড়া বিমানকে লাভজনক ও যাত্রীসেবার মান আরও বৃদ্ধি করা বিষয় কমিটি সুপারিশ করে, গত ১৬ মে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন থেকে ঢাকা ফ্লাইটে যাত্রীদের চাহিদা থাকা সত্বেও ৮০টি সিট খালি থাকার বিষয়ে তদন্ত করে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে রিপোর্ট প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ, মো: নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল আশরাফ খান, মোঃ আফতাব উদ্দীন সরকার এবং সাবিহা নাহার বেগম বৈঠকে অংশগ্রহন করেন। এছাড়া বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিঃ পরিচলনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই