মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিন চালু করলেই সংসদ ভবনের একাংশে কম্পন !

জাতীয় সংসদ ভবনের ব্যবহৃত এসি ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে আরও ১৪ বছর আগে। যথাসময়ে এসব না বদলানোয় সংসদ ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় মৃদু কম্পন হচ্ছে। এতে সংসদ ভবনের স্থায়িত্ব কমছে স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা এমন কথা বললেও সংসদে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা বলছেন, এই কম্পনে কোনো সমস্যা নেই। এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ এসির মেশিন ও যন্ত্রাংশ পরিবর্তনে বাজেট পেশ করলেও তা পাশ না হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ কিছু করতে পারছে না।

স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে লুই আই কান গড়েছিলেন জাতীয় সংসদ ভবন। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম এবং শেষ অধিবেশনে প্রথম সংসদ ভবন ব্যবহৃত হয়। তখন থেকেই আইন প্রণয়ন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূল কেন্দ্র হিসাবে এই ভবন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে দীর্ঘ ৩৩ বছরের এই পথ পরিক্রমায় পুরনো হয়ে উঠেছে এই ভবনের ৯ম তলায় স্থাপন করা সেন্ট্রাল এসি এবং এগুলোর মেকানিক্যাল যন্ত্রাংশ। ফলে প্রতিদিন সেসব মেশিন চালু করলে মৃদু কাঁপতে থাকে সংসদ ভবনের ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম তলা।

এ বিষয়ে ইমারত বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ভবনটি যখন করা হয় তখন লোড ও ভাইব্রেশন কেলকুলেশন করে করা হয়েছে। কিন্তু মেশিনগুলোর কম্পনের ফলে দুর্ঘটনা না ঘটলেও সংসদ ভবনের স্থায়িত্ব কমিয়ে দিচ্ছে। তাই সরকারের ও পিডব্লিউওডির উচিত তা দ্রুত বদলিয়ে ফেলা।

৯ম তলায় মেশিন রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেশিন রাখা সম্ভব। কারণ নীচে রাখলে তা থেকে বেনিফিট উপরে পাঠাতে অনেক এনার্জি কনজিউম হয়। তাই ৯ম তলায় মেশিন বসানো হলেও এতে ভাইব্রেশন কমানোর মেশিন ব্যবহার করতে হবে অথবা আধুনিক কম্পনরোধক মেশিন বসাতে হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল নয়টা থেকে সংসদ সচিবালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। আর এই সময় চালু করা হয় সংসদের ভবনের ৯ম তলায় স্থাপন করা সেন্ট্রাল এসি। এইসব মেশিন দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে তা এখন তীব্র শব্দ ও ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ৯ম তলার সংসদ ব্লকে স্থাপিত আছে বৈদ্যতিক উপকেন্দ্র।

সংসদের গণসংযোগ শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসির মেশিন চালু করার সাথে সাথেই জনসংযোগ শাখার কামরাগুলো তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠে। নতুন কেউ এলে ভূমিকম্পও মনে করে ভুল করেন।

সংসদ ভবনের মেকানিকাল সংশ্লিষ্ট নানান বিষয়গুলো দেখভাল করে গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) ই/এম (ইঞ্জিনিয়ারিং/মেকানিক্যাল) সার্কেল-৩ উপ-বিভাগ। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সংসদ ভবনের এসি ও এসংক্রান্ত যন্ত্রাংশ ২০ বছর পর পাল্টানোর কথা থাকলেও ৩৪ বছরেও আধুনিক মেশিন বসানো হয়নি। এছাড়াও সংসদ ভবনকে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথাক্রমে ১৩০০ ও ১২০০ টনের দুটি সেন্ট্রাল এসি বসানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ১২০০ টনের এসিটি সচল রয়েছে। তবে এটির খুচরা যন্ত্রাংশ বাজারে অপ্রতুল হওয়ায় অকেজো ১৩০০ টনের এসির মেশিনের যন্ত্রাংশ খুলে এটিকে সচল রাখা হয়েছে।

এছাড়া সংসদের ৯ম তলায় রক্ষিত আছে ৫টি জেনারেটর। যার মধ্যে ৩টি স্থাপন করা হয়েছিল ভবন নির্মাণের সময়। আর বাকি দুটি স্থাপন করা হয় বিগত ১৫ বছর আগে। কিন্তু বর্তমানে দুটি জেনারেটর সচল রয়েছে। এগুলো থেকেও কম্পন ও শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে ভবনের ৯ম তলায় বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর ও এসির মেশিনের কারণে সৃষ্ট কম্পনে ভবনের ক্ষতি হতে পারে কিনা জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ভবনের নকশায় ৯ম তলায় ইলেক্ট্রনিক ফ্লোর হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাই এই কম্পনে ভবনে ওপর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।

সংসদ ভবন কম্পনের বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের সার্কেল-৩ উপ-বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হাশেম বলেন, ২০ বছর পর মেশিনগুলো বদলিয়ে ফেলার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনে দুই বছর আগে পুরাতন এসির মেশিন ও জেনারেটর পাল্টে আধুনিক জেনারেটর ও এসির মেশিন ক্রয়সহ আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য (ইলেকট্রমেকানিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট) প্রায় ১০৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু এতদিন হয়ে গেলেও একনেকে তোলা হয়নি এই বাজেট। ফলে গণপূর্ত বিভাগ কিছু করতে পারছে না।

মো. আবুল হাশেম বলেন, চার বছর আগেও সংসদ ভবনে এসির মেশিনগুলোর জন্য কম্পন অনুভূত হতো না। অথচ এখন হচ্ছে। দ্রুত যদি এসব পুরনো মেশিন সরিয়ে ফেলা না হয়, তবে এই কম্পন আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে ভবনের কাঠামোতে ক্ষতি হতেও পারে। প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই