শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা প্রেরণে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের হুমকি, দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন কারণে দেশে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। আর তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণের ক্ষেত্রে। এ প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ও মানবাধিবার পরিস্থিতি মানসম্পন্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিকের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দেয়া বক্তব্যে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক লি এর প্রশ্নের জবাবে ডোজারিক সেনা প্রেরণে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যাচাই বাছাইয়ের কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।
সাংবাদিক লি. তার প্রশ্নে জানতে চান, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে (বেগম খালেদা জিয়া) গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে এবং গণমাধ্যমে কিছু সেন্সরশিপও চলছে। দেশটি একই সঙ্গে শান্তিরক্ষী মিশনে বৃহৎ অবদান রাখছে। এ বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স (ডিপিএ) অথবা সেক্রেটারি জেনারেল কি করছে?’
জবাবে স্টিফেন ডোজারিক বাংলাদেশের মানবাধিকার, বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনারের কার্যালয় থেকে শান্তির আহ্বান জানিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে আমিও সে ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও আটক রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার ব্যাপারে সেচ্ছাচারমূলক আচরণ করবে না। আমরা আশা করবো- এসব বিষয়ে সরকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’
তার মতে, বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি চলছে তা বস্তুত ‘গোলযোগপূর্ণ’।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাবাহিনীর শীর্ষ অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে সাংবাদিক লি মুখপাত্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন রাখেন, ‘সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাজনৈতিক বিষয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার সিকিউরিটি ফোর্সের পদতলকে বেশ খানিকটা অবদমিত করেছে, এটা কি জাতিসংঘে সৈন্যবাহিনী (বাংলাদেশের) মোতায়েনের পুনর্মূল্যায়নে কোনো প্রভাব ফেলবে?’
এর জবাবে ডোজারিক বলেন, ‘এক্ষেত্রে মানসম্মত মানবাধিকার যাচাই বাছাই পলিসি প্রয়োগ অব্যাহতভাবে রাখা হবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের এমন মন্তব্য সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বসবাসরত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক ইউং কমান্ডার সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এটি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সদস্য, সরকার ও রাজনীতিবিদদের জন্য একটি বার্তা। কারণ বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সার্বিকভাবে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশ হিসেবে নিজের দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিকভাবে এটি প্রশ্ন উঠবেই।’
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি মাসের মাঝামঝি সময়ে বাংলাদেশে অব্যাহত রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কড়া ভাষায় একটি বিবৃতি দিয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ মিটমাটে ব্যর্থ হওয়ার পর যেভাবে সহিংসতা বাড়ছে, তা খুবই উদ্বেগজনক।
সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সংযম প্রদর্শন এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধেরও আহ্বান জানানো হয় এই বিবৃতিতে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বিশেষ করে যেভাবে নির্বিচারে গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের সর্বশেষ এই রাজনৈতিক সংঘাতের সময় যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার সবগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন।
বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং আটকের ক্ষেত্রে সরকার যেন স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় না নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া সব পদক্ষেপে যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন না ঘটে সেজন্যে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয় বিবৃতিতে।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবাধিকারের চূড়ান্ত অবনতির সঙ্গে সঙ্গে অধিকার সংরক্ষণে সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছে। এত বলা হয়েছে, হত্যা, অপহরণ, উদ্দেশ্যমূলক পুলিশী হয়রানিসহ নানাবিধ উপায়ে লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে মানবাধিকার।
মন্তব্য চালু নেই