শহীদদের শ্রদ্ধায় ‘বাধা’ বিএসএফ-বিজিবি!
কেবল ভাষার টানেই সীমান্তে দুই বাংলার মানুষ একত্র হলেও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারল না। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রবিবার সকাল হতেই আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর সীমান্ত এলাকায় শত শত মানুষ ভিড় করে। কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ এবং বাংলাদেশের বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারেনি কেউ।
সরিজমিনে দেখা গেছে, ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজ সকাল থেকেই দু’দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতে থাকে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের দু’পাশে। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা নিজ নিজ দেশের সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি কাউকে আসার সুযোগ দেয়নি।
নরসিংদী, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে আসা সাইমুন, জুনাঈদ, তপন, শিখর, শ্রবন্তী, প্রিয়াঙ্কাসহ সীমান্ত এলাকায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের মানুষ ত্রিপুরার আগরতলায় এবং ত্রিপুরারাজ্যের মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরে বেড়িয়েছে। সন্ধ্যার আগেই আবার তারা নিজ নিজ দেশে চলে আসে। কিন্তু এবার সীমানার কাছাকাছিও যেতে পারিনি। বিজিবি সদস্যরা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ তিন বছর আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় স্থলবন্দর এলাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন বন্ধ রয়েছে।
আখাউড়া নাছরিন নবী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক হৃদয় আল মাহমুদ বলেন, কেবলমাত্র ভাষার টানেই এদিন দুই বাংলার মানুষ একত্র হতাম। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানের সুরে সুরে সীমান্ত রেখা ভুলে যেতাম সবাই। কিন্তু বিজিবি-বিএসফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্দর এলাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি উদযান করার অনুমতি দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমরা আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে মাতৃভাষা দিবস পালন করেছি। এদিন দু’দেশের মানুষ একে অন্যের দেশে ঘুরে বেড়াত। দিনব্যাপী আয়োজিত একুশের আলোচনা, গান ও কবিতায় ভারত ও বাংলাদেশের মন্ত্রী, বিধায়ক, এমপি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ উপস্থিত হাজারো সাংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক ও দু‘দেশের বাংলাভাষীরা আনন্দে মেতে উঠত। এবার স্থলবন্দরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় বিএসএফ এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি না থাকায় আখাউড়া স্থলবন্দরের বাংলাদেশ-ভারত ২০২৩ সীমান্ত পিলারের পাশে শহীদ মিনার নির্মাণ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠান হয়নি।’
মন্তব্য চালু নেই