ভারত থেকে ফিরছে পাচার হওয়া ১৩ তরুণী

দালালদের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশি দেশ ভারতে পাচার হয়ে যায় অনেকে। এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন বয়সের তরুণী। পাচারের শিকার হয় অনেক শিশুও।

নানা লোভনীয় কাজের প্রস্তাব দিয়ে পাচারকারীরা এদের ভারতে নিয়ে গেলেও বেশিরভাগের ভাগ্যেই জোটে যৌনদাসত্বের শৃঙ্খল। অবশ্য কারো কারো ভাগ্য আবার তাদের দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।

ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া এমনই প্রসন্নভাগ্য ১৩ জন ফিরে আসতে যাচ্ছে তাদের নিজেদের দেশে। এদের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের আশ্রয় হয়েছে পতিতালয়ে। সেখান থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করার পর তারা বাস করছে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া তরুণীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। গত দুই বছর ধরে দেশে ফেরার প্রহর গুনছে তারা।

বাংলাদেশের অনেক মা-বাবা অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য তাদের মেয়েদের কাজের সন্ধানে ‘বিদেশ’ পাঠান। দরিদ্র পরিবারগুলোর ক্ষেত্রেই ঘটে এমন ঘটনা। পাচারের শিকার হয়ে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার ১৬ বছরের এক তরুণী জানায় তার পাচার হওয়ার ঘটনা। ‘সুইটি খালা’ নামের এক নারী পাচারকারী তাকে লোভনীয় চাকরির কথা বলে ‘বিদেশ’ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। সে এতে রাজি হয়।

ওই নারীর সাথে দেশ ছাড়ে সে। সুইটি খালা তাকে নিয়ে যায় ভারতে। সেখানে তাকে একটি গৃহকর্মীর চাকরি দেয়া হয়। ভারতের ব্যাঙ্গালুরে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে বলা হয় ‘এটা দুবাই’। যে বাসায় সে কাজ করতো সেখান থেকে তার মায়ের সাথে কথা বলতে দেয়া হতো না। এক পর্যায়ে বাসাটি থেকে পালিয়ে আসে ওই তরুণী। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে একটি কিশোরী আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যায়।

একইভাবে ঢাকা থেকে পাচার করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ১৭ বছরের আরেক তরুণীকে। বিয়ে করার কথা বলে এক লোক তাকে সেখানে নিয়ে গেলেও তাকে বিক্রি করে দেয়া হয় একটি পতিতালয়ে। পরে সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

মাগুরা থেকে পাচার হয়ে যাওয়া আরো এক তরুণীও দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। সে তার মা বাবার কাছে ফিরে আসতে চায়। তার ভাষায়, ‘মা-বাবাকে দেখা মাত্রই আমি তাদের জড়িয়ে ধরব।’ দীর্ঘদিন ধরে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকায় সেখানে বাস করা অন্যদের সাথেও তার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাদের জন্যও তার কষ্ট হবে বলে জানায় সে।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, রোববার কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে তাদের। ব্যাঙ্গালুর থেকে একটি বিমানে কলকাতায় নেমে সেখান থেকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে তারা। ব্যাঙ্গালুরের জেলা শিশু কর্মকর্তা দিব্য নারায়নাপ্পা তাদের নিয়ে আসবেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের সীমান্তে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর নিশ্চিত করতে চাই।’



মন্তব্য চালু নেই