শপথ ভঙ্গ : ‘দুই মন্ত্রীর কোনোভাবে পদে থাকা উচিৎ নয়’

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন- আপিল বিভাগের এমন পর্যবেক্ষণ আসার পর এই দুই মন্ত্রীর কোনোভাবেই পদে থাকা উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক।

যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়ের আগে সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য গেল মার্চে দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে সাজা দেওয়া হয়েছিল গতকাল তার প্রকাশিত তার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরো কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মতামত জানতে চাইলে তারা কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। কেউ আবার নিজের মত না দিয়ে বিষয়টি শাস্তিপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রীর উপরই ছেড়ে দিয়েছেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন রক্ষার যে শপথ বিবাদীরা নিয়েছেন, সেই দায়িত্বের প্রতি তারা অবহেলা করেছেন। তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।’

সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন দুই মন্ত্রী- সুপ্রিম কোর্টের এমন রায়ের পর তাদের পদ থাকবে কি না এ বিষয়ে সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, শপথ ভঙ্গের বিষয়ে আইন ও সংবিধানে ওইভাবে কিছু বলা হয়নি। এটা জনমতের ওপর নির্ভর করে। তারা থাকতে পারবে কি না, জানতে হলে জনমত যাচাই করার পর বোঝা যাবে।

এই দুই মন্ত্রীর তাদের পদে থাকা উচিৎ কি না- এ বিষয়ে ব্যক্তিগত মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলবো না। রাষ্ট্রে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে।

আরেক আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেছেন, রায়ে বলেছেন তারা মন্ত্রীরা শপথ ভঙ্গ করেছেন, কিন্তু রায়ে কোথাও বলে নাই একই সঙ্গে সংবিধানেও উল্লেখ নাই শপথ ভঙ্গের বিষয়ে।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি ব্যরিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমও।

রায়ের ফলে এই দুই মন্ত্রী তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, এই রায়ের মূল বিষয় হচ্ছে, দুই মন্ত্রী গুরুতর আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সকল বিচারপতি একমত হয়ে সেটা করেছেন। তাদের শপথ ভঙ্গের বিষয়টি এই মামলার বিবেচ্য বিষয় ছিল না। তারপরও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে একটা ফাইন্ডিংস এসেছে। কিন্তু তারা মন্ত্রী থাকতে পারবেন কি না, এমন কিছু বলা হয়নি। এটা তাদের সুবিবেচনা ও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

তবে শাহদীন মালিক ভিন্ন মত দিয়ে বলেন, যারা সরকারের কোনো কর্মে নিয়োজিত তাদের যদি জরিমানা বা জেল হয়, তাহলে পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই বিধান অনুসারে তাদের পদচ্যূত হওয়ার কথা। এখন কেউ যদি আইনের তোয়াক্কা না করেন, সেটা ভিন্ন কথা।
শপথ ভঙ্গ করার পরে সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তির এক মুহূর্তও পদে থাকার নৈতিক এবং সাংবিধানিক অধিকার নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধানের কোনো বিধান লঙ্ঘন হলে সেটার সাজা সংবিধানে বলে দেওয়া নাই। সংবিধান অপরাধীদের আইন না। তবে ধারণাটা হলো, কেউ যদি কখনো সাংবিধানিক পদে থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করে, তাহলে নৈতিকতা ও আইনের ভার মাথায় নিয়ে সেই মুহূর্তে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া উচিত।’খবর জাগো নিউজের।



মন্তব্য চালু নেই