শক্তিশালী হয়ে উঠছে জেএমবি!
‘দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে। এ জন্য তারা ছদ্মনাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে তাদের জঙ্গি কার্যক্রম চালায়।’
রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানালেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, ‘দেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনায় জেএমবি বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সাথী ভাইদের প্রশিক্ষণ দেয়। জেএমবির একাধিক এহসার/গায়রে এহসার সদস্য বিপুল পরিমাণ বোমা/বিস্ফোরক নিয়ে রাজধানীতে এসেছে বলে র্যাব গোয়েন্দা তথ্যে জানতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছুদিন যাবৎ জেএমবির আত্মগোপনে থাকা সদস্যদের খুঁজে বের করার জন্য র্যাবের প্রতিটি জঙ্গি দমন সেল নিরলসভাবে কাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে র্যাব নিশ্চিত হয় যে, জেএমবির একাধিক এহসার/গায়রে এহসার সদস্য রাজধানীতে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ বোমা/বিস্ফোরক নিয়ে রাজধানীর দক্ষিণখান মোল্লারটেক প্রেমবাগান এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ছদ্মনামে কৌশলে অবস্থান করছে।’
‘এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১০-এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল রাজধানীর দক্ষিণখান মোল্লারটেক প্রেমবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমির এবং এহসার সদস্য আ. রাজ্জাক হায়দার মামুন (৩৫), নওগাঁ জেলার আমির এবং গায়েরে এহসার সদস্য জিয়াউল বারী ডালিম (৩২), জেএমবির দিনাজপুর জেলার আমির ও এহসার সদস্য মো. কোরবান আলী মোহাম্মদ আলী হাঞ্জালা (৫৫) ও গায়েরে এহসার (জেএমবির রংপুর জেলার অর্থ সম্পাদক) মো. মোফাজ্জল হোসেনকে (২২) গ্রেফতার করে। এ সময় তল্লাশি চালিয়ে তাদের কাছ থেকে একটি আর্জেস গ্রেনেড, ৩৪টি নন-ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ১৪টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, আনুমানিক ৩০ মিটার করডেক্স, দুই কেজি ৫০০ গ্রাম স্প্লিন্টার, ৫০০ গ্রাম গানপাউডার, এক কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ, ছয়টি বড় ককটেল, ২৪টি ছোট ককটেল, ১২টি পেট্রোল বোমা, আনুমানিক দুই কেজি কাচের মারবেল, ৫০০ গ্রাম সালফিউরিক অ্যাসিড, একটি ডেটোনেটর বক্স, এক বান্ডেল ইলেকট্রিক তারসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণের প্রেসি ও নামসংবলিত বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধার করে র্যাব।’
মুফতি মাহমুদ আরো বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা জেএমবি সংগঠনকে পুনরায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেএমবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের কাছ থেকে ইয়ানত সংগ্রহের কার্যক্রম হাতে নেয়। একই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা করার পরিকল্পনা করে। এরপর গত ২৫/২৬ ফেব্রুয়ারি জেএমবির এহসার সদস্য আ. রাজ্জাক ও গায়েরে এহসার জিয়া-উল বারী রাজধানীর দক্ষিণখান মোল্লারটেক প্রেমবাগান এলাকায় এসে সুবিধাজনক স্থানে ছদ্মনাম ও ঠিকানা দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। সর্বশেষ গত ১ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মজুতকৃত বিপুল বিস্ফোরক ও গ্রেনেডসহ কৌশলে বিভিন্ন পন্থায় রাজধানীর উক্ত ভাড়াকৃত বাসায় আনে।’
তিনি বলেন, ‘ভাড়া বাসায় অবস্থানপূর্বক জেএমবি নেতা-কর্মীরা আরো বেশি অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুতের পরিকল্পনা করে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু দেশের সকল স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ নজরদারি থাকায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।’
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য জেএমবি সদস্যরা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে, তাদের গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য সব জায়গায় র্যাবের জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য চালু নেই