রুবেলকে নিয়ে প্রথম ছাপা হওয়া সেই লেখা!

আমার বাড়ি থেকে ওর বাড়ির দূরত্ব খুব জোর ছয়-সাত কিলোমিটার হবে। তবে আমার সেই কৈশোর থেকে যৌবন অবদি আড্ডার সময়টা কেটেছে ওদের বাড়ির কাছের মোড়েই।

সেখানেই দেখা হতে পারতো।

রুবেলকে আমি প্রথম দেখতে পারতাম বাগেরহাটের কোনো ক্রিকেট মাঠে।

আমি নিজে এলাকার অনেক খেলা ঘুরে ঘুরে দেখতাম, পাড়াতো খেলা আয়োজন করতাম, এমনকি রুবেলের কয়েকটা বন্ধু আমার দলে খেলেছেও; তাই এলাকায় দেখা হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো।

কিন্তু রুবেলকে প্রথম আসলে দেখলাম না, শুনলাম। এলাকার এক বন্ধু ফোন করে বললো, ‘দোস, আমাগো একটা ছেলে পেসার হান্টে ফাস্ট হইছে। ঢাকায় কোন এক ইমরান সাহেবের কাছে নাকি আছে।’

দেশের প্রবাদ পুরুষ কোচ সারোয়ার ইমরান তখন জাতীয় দলের সঙ্গেই আছেন। ইমরান ভাই শুনে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করো। নেটেই দেখবা।’

নেটে দেখি শুকনো মতো একটা ছেলে শরীর থেকে অনেক দূরে হাত টেনে নিয়ে বল ছুড়ছে। একটা বল লাফিয়ে উঠে আফতাবের মুখে লাগলো। আশরাফুল বেরিয়ে বললো, ‘দাদা, জিনিস আছে।’

আমি পরদিন লিখে দিলাম, ‘বাংলাদেশের নেটে মালিঙ্গা।’

এই তথ্যটুকু জানার পর অনেকেই রুবেলকে নিয়ে প্রথম প্রকাশিত লেখাটা পড়তে চেয়েছেন। মুশকিল হলো, আমার নিজেরই সংগ্রহে লেখাটা নেই। আছে শুধু রুবেলের নিজের কাছেই।

ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করার পরও অভিমান করে বলছিলো, ‘বাসায় এলেন না তো। এলে দেখতে পেতেন আপনার ওই লেখাটা বাঁধিয়ে রেখেছি।’

অবশেষে লেখাটার একটা ‘সফট কপি’ উদ্ধার করা গেল একটা ফোরাম থেকে। স্মৃতি খুব ভালো সাড়া না দেওয়ায় বুঝতে পারছি না যে, পুরো লেখাটা অবিকৃত অবস্থায় আছে কি না।

তারপরও নাই মামার চেয়ে কানা মামাকে ভরসা করে লেখাটা দেওয়া হলো। আগ্রহীরা চোখ বোলাতে পারেণ!

বাংলাদেশের নেটে ‘মালিঙ্গা’!
এক দশকেরও বেশি শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ের সমার্থক হয়ে আছেন চামিন্ডা ভাস ও মুত্তিয়া মুরলিধরন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো ম্যাচের আগেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওই দুটি মুখ। বাড়তি প্রস্তুতিও নিতে হয় এই দুই বোলারের কথা ভেবে। ‘দুই বোলার’ কথাটা আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরে। এই দুজনের সঙ্গে যে যোগ দিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা।

কানে দুল, রঙচঙে চুল, ব্যতিক্রমী বোলিং অ্যাকশন−এ সবই মাঠে তাঁকে আলাদা করে দেয়। কিছুদিন ধরে আরও আলাদা করে দিচ্ছে দুর্দান্ত গতি আর দারুণ বোলিং। গত বিশ্বকাপেই মালিঙ্গা বুঝিয়ে দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হওয়ার আগে ভাস-মুরালির মতো তাঁকে নিয়েও এখন ভালোই ভাবতে হবে প্রতিপক্ষকে। শ্রীলঙ্কা সফরের আগে বাংলাদেশও ভাবছে। ব্যতিক্রমী অ্যাকশনের কারণেই মালিঙ্গার বোলিং খেলার প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন। বাংলাদেশ দলের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, মিরপুর স্টেডিয়ামে নেট প্র্যাকটিসেই তাঁরা পেয়ে গেছে ‘মালিঙ্গা’কে!

‘আসল’ মালিঙ্গা যে নেট অনুশীলনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সাহায্যে হাত বাড়াননি, সেটি আপনার বুঝে নেওয়ার কথা।

নেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যাঁকে মালিঙ্গা মনে করে খেলছেন, তাঁর নাম রুবেল। মালিঙ্গার সঙ্গে অ্যাকশনে, মিল বলের গতিতেও। অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল তো রীতিমতো বিস্নিত এই ‘মালিঙ্গা’র পারফরম্যান্সে, ‘ওর শুধু অ্যাকশনে মিল আছে, তা-ই নয়। বলের পেস আর সুইংয়ের কারণেও ওকে সামলানো মালিঙ্গাকে সামলানোর মতোই কষ্টকর।’

নেটের ‘মালিঙ্গা’ রুবেল আসলে গ্রামীণফোন পেসার হান্টের আবিষ্ককার। বাগেরহাটের এই তরুণ ঘণ্টায় ৮৪ মাইল গতিতে বল করে পেসার হান্টে দ্রুততম বোলারের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। শুধু রুবেল নন, পেসার হান্টে আবিষ্ককৃত আরও পাঁচজন ফাস্ট বোলারকে এবার প্রথম দিন থেকেই ডেকে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে। সেই সঙ্গে একাডেমি ও বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকে আসা পেসাররা তো আছেনই। এখন পর্যন্ত নেট প্র্যাকটিসে মূলত গতির সঙ্গে লড়াই-ই চলছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।

কাল বৃষ্টি আসার আগে সকালে সেন্টার উইকেটে নেট প্র্যাকটিসটাও একটু ‘অন্য রকম’ উইকেটে হলো। উইকেটে রাখা হয়েছিল সামান্য ঘাস। তাতে বলের গতি ও বাউন্সটা ভালোই হলো। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ‘এ’ দল নিয়ে শ্রীলঙ্কা ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা থেকে কোচ শন উইলিয়ামসের ভালোই জানা, শ্রীলঙ্কার উইকেট এই উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রমী, তা যথেষ্টই বাউন্সি। প্রস্তুতিটাও চলছে তা মাথায় রেখেই।

শ্রীলঙ্কায় খেলা মানেই যেখানে দুঃস্বপ্নে মুত্তিয়া মুরালিধরনের দেখা পাওয়া, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তাঁর কথা ভুলে পেস বোলিং সামলাতেই এত মনোযোগী হয়ে পড়ল কেন? কারণটা জানালেন মোহাম্মদ আশরাফুল, ‘মুরালিধরনকে নিয়ে যে চিন্তা নেই, তা নয়। আমরা ওর জন্যও কাজ করছি বা করব। কিন্তু আগে তো এটা নিশ্চিত করতে হবে, ও বোলিংয়ে আসা পর্যন্ত যেন আমরা উইকেটে থাকতে পারি।’ বলে হো হো করে হাসলেন আশরাফুল।



মন্তব্য চালু নেই