‘লিটন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জাপা নেতা কাদের’
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ‘গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় এমপি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতা ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন। তিনি লিটনকে হত্যার জন্য গত এক বছর ধরে নানাভাবে পরিকল্পনা করে আসছিলেন। গত ছয় মাস থেকে তিনি এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া কিলারদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।’
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন।
ডিআইজ বলেন, ‘কাদের খাঁনের গাড়িচালক আবদুল হান্নান কিলারদের পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে।হত্যাকাণ্ডে কাদেরের ভাতিজা শাহীন মিয়া ও কেয়ারটেকার মেহেদীসহ চারজন অংশ নেয়। এরমধ্যে রানা নামে একজন পলাতক রয়েছে। তাকেও গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে হান্নান, মেহেদী ও শাহীনকে মঙ্গলবার ভোর রাতে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। পরে তারা আদালতের বিচারক মইনুল হাসান ইউসুফের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।’
ডিআইজি গোলাম ফারুক আরও বলেন, ‘কাদের খাঁন শুধু এমপি লিটনকে হত্যা নয়, উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকেও হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন।’
কারণ হিসেবে ডিআইজি উল্লেখ করেন, মূলত এমপি লিটন ও শামীম হায়দারকে সরিয়ে দিতে পারলে তিনি সুন্দরগঞ্জে আবারও এমপি নির্বাচিত হবেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার ইচ্ছা ও লোভ থেকেই এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। বুধবার দুপুরের মধ্যে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে কাদের খাঁনকে হাজির করা হবে বলে জানান তিনি।
ডিআইজি বলেন, ‘লিটন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানাদিক নিয়ে তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে আসছিল পুলিশ। এ সময় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবহার করা গুলি ও ম্যাগজিনের সূত্র ধরেই কাদের খাঁনকে চিহ্নিত করা হয়। হত্যাকাণ্ডে যে অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয় তারও প্রমাণ মিলেছে কাদের খাঁনের ব্যবহার করা অস্ত্র থেকেই। হত্যাকাণ্ডে আরও কোনও পরিকল্পনাকারী বা হত্যার সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’
এ সময় পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম (বিপিএম, সেবা), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহম্মেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে লিটনের স্ত্রী সৈয়দ খুরশিদ জাহান স্মৃতি, বোন তাহমিদা বুলবুল কাকুলীসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহবাজ (মাস্টারপাড়া) গ্রামের নিজ বাড়িতে এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় লিটনের বোন তাহমিদা বুলবুল বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে ১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের ৫২ দিন পর জড়িত সন্দেহে ডা. আবদুল কাদের খাঁনকে মঙ্গলবার বিকালে বগুড়া জেলা শহরের কাদের খানের পরিচালিত গরীব শাহ ক্লিনিক থেকে আটক করা হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া থেকে পুলিশভ্যানে করে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় কাদের খাঁনকে।
আটক কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি। তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপরহাটি (খাঁনপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিবার নিয়ে বগুড়া জেলা শহরের গরীব শাহ ক্লিনিকের চারতলা ভবনের ওপর তলায় বসবাস করতেন।
এদিকে, সাবেক এমপি কাদের খাঁনকে আটকের আগে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতে জেলা শহরের ব্রিজ রোড় এলাকা থেকে গাড়িচালক আবদুল হান্নান, ভাতিজা শাহীন মিয়া ও কেয়ারটেকার মেহেদীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য অতিরিক্তি চিপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের বিচারক মইনুল হাসান ইউসুফের কাছে তারা স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর রাত ৯টার দিকে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মন্তব্য চালু নেই