লিখিত বক্তব্যে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
ভারতের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে শনিবার দুপুরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রথমে একান্ত এবং পরে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকের পর প্রতিরক্ষা, ঋণ, মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করা হয়।
পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আত্মজীবনীর হিন্দি অনুবাদ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শীর্ষ বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ভারত আমাদের সবচেয়ে কাছের ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নের অংশীদার। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এ কারণে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে ভারতীয় সৈন্যরা শহীদ হয়েছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব বিকেলে। ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেতে ভারতের সাহায্য চাই। ভারত সরকার আমাদের সাহায্য করতে রাজি আছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারত অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং শিক্ষা, বিজ্ঞান, টেকনোলজি ও উদ্ভাবনীতে দ্রুত এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বর্তমানে ৭ শতাংশ। বাংলাদেশও স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দারিদ্র্য নিরসনে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে এবং সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে আমরা বরাবরই বদ্ধপরিকর। আমরা সন্ত্রাস এবং চরমপন্থীকে জিরো টলারেন্সে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
‘সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছি। আমরা উভয়ই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চাই। আমরা পারস্পরিক উদ্বেগ ও বোঝাপড়া বাড়াতে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমি দুই দেশ এবং এ অঞ্চলের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছি। আমরা খুলনা-কলকাতা রুটে বাস সার্ভিস চালু করেছি, খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস যোগাযোগ প্রক্রিয়াধীন আছে। বিরল-রাধিকাপুর মালবাহী রেলযোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে শুল্কমুক্ত পাট রফতানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়টির সমাধান হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য আনতে ভারতের জন্য স্পেশাল বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দু’দেশের মধ্যে অন্যান্য বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাপ্লাই নেওয়ার চুক্তি হয়েছে। নেপাল ও ভুটান থেকে সীমান্তে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তিস্তা-পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রজেক্টের মতো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এ বিষয়ে ভারত আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবে।’
‘এ ছাড়া কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। অর্থনৈতিক সমঝোতা, প্রতিরক্ষা, শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু শক্তির ব্যবহার, মহাশূন্য তথ্যপ্রযুক্তি গণমাধ্যম ও অন্যান্য বিষয়,’ জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করার লক্ষ্যে আমরা আগরতলা ভিসা অফিসকে অ্যাসিসট্যান্ট হাইকমিশনে আপগ্রেড করেছি এবং সম্প্রতি গুয়াহাটিতে সহকারি হাইকমিশন খোলা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে আরো বেশি ইনডিয়ান ভিসা সেন্টার খোলা হয়েছে। এতে আমাদের উভয়েরই আত্মবিশ্বাস বাড়বে। উভয়ের দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হবে।’
দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে সকালে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদি। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর দিল্লির রায়ঘাটে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
চার দিনের সফরে শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে নয়া দিল্লিতে বিমান বাহিনীর পালাম স্টেশনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারি শিল্প, পাবলিক অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। সফর শেষে সোমবার দেশে ফিরবেন তিনি।
গত সাত বছরের মধ্যে এটাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর। এর আগে ২০১০ সালে দেশটিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
মন্তব্য চালু নেই