লতিফ সিদ্দিকীসহ ভিআইপিরা টার্গেটে ছিল জঙ্গিদের

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের জঙ্গিরা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজন ভিআইপি ব্যক্তিসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারী, উত্তরা পশ্চিম, বিসিক নগরী নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের ৫ টি দল।

গ্রেপ্তারকৃতরা হল-বোমা বিশেষজ্ঞ মো. রফিক আহমেদ ওরফে সাজিদ (৩৪), প্রাইম ইনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ ওমর ওরফে ফয়জুল ওরফে রবি (২৫), বিস্ফোরক সংগ্রহকারী নাদিম আহমেদ ওরফে সুমন (৩০) ও সরবরাহকারী মো. সালাউদ্দিন আহমেদ।

এ সময়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রকারের উচ্চ মাত্রার বিস্ফোরক,ডেটোনেটর, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, একটি  সাবস্টেন গান ও বোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত দুইটি ল্যাবরেটরির সন্ধান পাওয়া যায়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, সন্ধান পাওয়া ল্যাবরেটরির একটি হল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে এবং অপরটি হল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। এসব ল্যাবরেটরিতে বেশ কয়েক প্রকারের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক পদার্থ পাওয়া যায়। ইতোপূর্বে এ ধরণের বিস্ফোরক পদার্থের ব্যবহার বাংলাদেশে দেখা যায়নি।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা বাংলাদেশ হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য। রফিক হরকাতুল জিহাদের অপারেশন উইংয়ের নেতা এবং গ্রেপ্তারকৃত ওমর বোমা বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার চার্জশিটভূক্ত আসামি মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে আবু জাফর তাকে ৬ষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পরে মাওলানা রফিক তার লেখা পড়ার দায়িত্ব নেয়।

তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গি বোমারু মিজান নিজেকে বোমা ফাটানো বিশেষজ্ঞ দাবি করলেও গ্রেপ্তার হরকাতুল জিহাদের ওমর নিজেকে বোমা তৈরির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করে।

মনিরুল ইসলাম বলেন তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত সাবস্টেনগানটি মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে আবু জাফরের। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পরে উত্তরাধিকার সূত্র সেটি মাওলানা রফিক ব্যবহার করতেন। গত আগস্ট মাসেই রাজধানী, চট্রগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ও এ সকল এলাকার বিভিন্ন ভিআইপি ব্যক্তিদের উপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় থাকায় ওই সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ঈদ ও বিভিন্ন কারণে তা অক্টোবর মাসে করার পরিকল্পনা ছিল।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বাংলাদেশে জিহাদী গ্রুপ তৈরির করার একটি প্লাটফর্মও ছিল। একারণে তারা বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছেন। তাদের অর্থের কোন অভাব নেই। তবে এ অর্থের যোগান কোথা থেকে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

যুগ্ম কমিশনার বলেন, জনাকীর্ণ স্থান ও বড়বড় স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনাও ছিল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডেটোনেটর দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষ হত্যা করা সম্ভব।

অভিযানে অংশ নেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, সহকারী কমিশনার মো. রহমতউল্লাহ চৌধুরী, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মাহমুদা আফরোজ লাকী ও হাসান আরাফাতের সহ ৫ টি দল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর, ঢাকা মহানগর মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত  উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।



মন্তব্য চালু নেই