লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিতে স্পিকারের চিঠি

প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সোমবার স্পিকারের দফতর থেকে দুপুর সাড়ে ৩টায় সিইসির দফতরে এ বিষয়ে একটি চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের দীর্ঘ আট মাস পর তা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে স্পিকারকে সিদ্ধান্ত নিতে জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

গত মঙ্গলবার সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৫ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে আইন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আট মাস আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের বিষয়টিই স্পিকারকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগ থেকে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। চিঠিটি স্বাক্ষরের পর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বিশেষ বাহকের মাধ্যমে স্পিকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

এদিকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে হেফাজতসহ কিছু সাম্প্রদায়িক দল মাঠে নামায় সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তার বলিরেখা ফুটে ওঠে। আওয়ামী লীগ যে আর কোনোভাবেই লতিফ সিদ্দিকীর দায়-দায়িত্ব নিতে চায় না এবং আট মাস আগে থেকেই তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে কোনো সম্পর্ক নেই, সে বিষয়টিই দলের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। কিন্তু গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী মহানবী (সা.), হজ ও তাবলিগ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে লতিফ সিদ্দিকীকে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ এবং পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্য পদও খারিজ করা হয়।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার সংসদ সদস্য থাকবে কি না, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে।

উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাক্তন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়। বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের আন্দোলনের হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। পরদিন তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। গত ২৯ জুন উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি জামিনে মুক্তি পান।



মন্তব্য চালু নেই