লঞ্চের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু

সড়কপথে বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। আর দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথে (লঞ্চ কেবিন) আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে আজ রোববার ( ২৬ জুন) থেকে। তবে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য টিকেটিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

লঞ্চে ওঠার আগেই টিকেট কাটতে হবে। যাত্রীদের টিকেট সংগ্রহ করে লঞ্চে উঠতে হবে। টিকেট ছাড়া কোনো যাত্রীকে লঞ্চে উঠতে দেয়া হবে না। অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া আগামী ৩০ জুন থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় অর্ধশত নৌ-রুটে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস শুরু হবে। ঈদের পর বিশেষ সার্ভিস চলবে ঈদের পর তিন দিন।

রাজধানীর সদরঘাটের নৌ-টার্মিনালের পশ্চিমপাশে নির্মাণাধীন নতুন ভবনে ২২টি টিকিট কাউন্টার খোলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন জানান, রোববার সকাল থেকে এ কাউন্টার উন্মুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব কাউন্টার থেকে সব লঞ্চের মালিকরা নিজেদের সুবিধামত টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা করবেন। টিকেট ছাড়া কোনো যাত্রী লঞ্চে উঠতে পারবে না। অতিরিক্ত যাত্রীও লঞ্চে ওঠাতে পারবে না। একেকটি লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতার উপর নির্ভর করে কাউন্টারে অতসংখ্যক টিকেট বিক্রি করতে হবে লঞ্চমালিকদের।

এ ছাড়া ঈদের আগের ও পরের ৩ দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যতীত সব ধরনের ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ফেরি পারাপার বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র পচনশীল মালামাল বোঝাই ট্রাক পারাপার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।

জয়নাল আবেদিন আরও বলেন, সদরঘাট থেকে দেশের ৪১টি নৌপথে লঞ্চ ছেড়ে যায়। বর্তমানে এসব রুটে প্রায় ১৮০টি লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদ উপলক্ষে আরও নয়টি নতুন লঞ্চ আসবে। নতুন লঞ্চগুলো ফিটনেস, টাইম ও রুট পারমিট পেলেই ঈদযাত্রায় যুক্ত হবে বলেও তিনি জানান।

এর মধ্যে নতুন লঞ্চগুলো ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী এবং ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচল করবে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলবে বাংলার টাইটানিক খ্যাত সুন্দরবন-১০ ও পারাবত-১২, ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলবে এমভি রিপল ও বোগদাদিয়া-৭। এ ছাড়া ঢাকা থেকে পটুয়াখালী রুটে চলবে এ আর খান।

বাকি পাঁচটি লঞ্চ ঈদ উপলক্ষে এস এম গ্রুপ দেশের বিভিন্ন নৌরুটে চলাচলের জন্য আনবে বলে জানান জয়নাল আবেদিন।

এ ছাড়া ঈদে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে লঞ্চগুলোর ওপর কড়া নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেছেন, ‘কোনো অবস্থায়ই লঞ্চের ছাদে যাত্রী তুলতে দেয়া হবে না। গত বছর রমজান ঈদ আমরা ভাল ভাবে পার করেছি। আসন্ন ঈদও আমরা ভালোভাবে পার করব। নতুন করে দুর্ঘটনা ঘটুক আমরা চাই না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘নৌপথে শৃংখলা ফিরিয়ে আসতে পেরেছি। ফলে নতুন নতুন জাহাজ আসছে। এ পর্যন্ত ৯টি জাহাজ এসেছে। মধমুতি নামের আরেকটি জাহাজ আনা হয়েছে। শনিবার বিলাসবহুল সুন্দরবন-১০ লঞ্চ উদ্বোধন করা হয়েছে। এবারের ঈদে লঞ্চের ওপর কড়া নজরদারি থাকবে, যাতে অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে না পারে।’

কোনো নৌযানেই ওভারলোডিং গ্রহণযোগ্য হবে না বলে লঞ্চ মালিকদের প্রতি হুঁশিয়ার করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের শেষ দিকে আরও ৩টি ফেরি নামানো হবে। ফেরি তিনটি হরিন ঘাটে দেয়া হবে।

সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে লঞ্চ চলাচলের জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এ ছাড়া মাওয়া-বরিশাল, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও কিশোরগঞ্জে একটি করে ৪টি উদ্ধারকারী জাহাজ রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন নৌঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধ্যে ঘাট ইজারা প্রথা তুলে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো ঘাটের ইজারা তুলে দেয়া হয়েছে। আগামী বছর সবগুলো ঘাটের ইজারা প্রথা একেবাইে বন্ধ করে দেয়া হবে।

এদিকে সদরঘাট নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চে কেবল কেবিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়। রোববার (২৬ জুন) থেকে নদীপথে ভ্রমণকারীরা লঞ্চগুলোর কেবিনের আগাম টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে কেবিনের বাইরে সাধারণ আসনগুলোর টিকেট অগ্রিম বিক্রি করা হবে না।

এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে প্রায় ১৫০ থেকে ১৮০টি কেবিন রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-চাঁদপুরসহ অন্য সকল রুটের লঞ্চে ৮০ থেকে ১২০টি কেবিন রয়েছে।

জানা গেছে, এসি কেবিন (ডাবল) ১ হাজার ৮০০ টাকা, ননএসি কেবিন (ডাবল) ১ হাজার ৬০০ টাকা, এসি কেবিন (সিঙ্গেল) ১ হাজার টাকা এবং ননএসি সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৮৫০ টাকা। আর বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চে ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা।

এ ছাড়া ঢাকা-হুলারহাট রুটে ডেকের ভাড়া ২৫০ টাকা। কেবিন (ডাবল) ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক মো. মাহফুজ বলেন, ঢাকা-চাঁদপুর রুটে লঞ্চের ওপর নির্ভর করে কেবিনের ভাড়া নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ভিআইপি কেবিনের ভাড়া দুই হাজার পাঁচশত টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া হয়ে থাকে।

এদিকে নতুন চারটি লঞ্চ ঈদে নদীপথে যুক্ত হলেও পুরাতন কয়েকটি লঞ্চ ফিটনেস, টাইম ও রুট পারমিট পেলেই ঈদযাত্রায় যুক্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অন্যতম রুট নদীপথে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে যাত্রীদের চাপ খুব লক্ষণীয় থাকে। তাই বিশেষ উৎসবগুলোতেও অতিরিক্ত লঞ্চ যুক্ত করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই