রোহিঙ্গা নির্যাতন: আর চুপ থাকবে না হেফাজত

মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনায় কোন বিবেকবান মানুষ চুপ থাকতে পারে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামী্র নেতারা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের মুসলমানদের জিহাদ করা ফরজ হয়ে গেছে বলেও ফতোয়া দিয়েছেন তারা।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পরপর বায়তুল মোকারামের উত্তর গেটে দেখানো বিক্ষোভে এসব কথা বলেন হেফাজতের নেতারা।

পূর্বঘোষিত এই বিক্ষোভে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আগে থেকেই ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। তবে বিক্ষোভ হলেও কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।

গত অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একটি সন্ত্রাসী হামলায় নয়জন নিহত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত শতাধিক প্রাণহানি, ছয়শরও বেশি আটকের পাশাপাশি এক হাজার ২৫০টি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

এই পরিস্থিতিতে প্রাণে বাঁচতে দলে দলে রোহিঙ্গারা ছুটে আসছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কঠোর নজরদারির মধ্যেও তারা দেশে ঢুকে পড়ছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।

বাংলাদেশে আসতে দিন, টাকা দেব আমরা

হেফাজতের বিক্ষোভে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়ার নীতির কঠোর সমালোচনা করা হয়। নূর হোসেন কাশেমী বলেন, ‘অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের বর্ডার খুলে দেওয়া হোক। তাদের জন্য সরকারের চিন্তা করতে হবে না, বিশ্বের মুসলমানরা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে। আমাদের দেশের সমস্ত মুসলমান তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে।’

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্ডার খুলে দিন। না হলে জনগণ যখন ফুঁসে উঠলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’

জিহাদের ফতোয়া

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি মোহাম্মাদ ওয়াক্কাস বলেন, ‘মুফতির কাজ হচ্ছে ফতোয়া দেওয়া। আমার ফতোয়া হচ্ছে, মুসলিম রোহিঙ্গাদের যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে তাতে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের মুসলমাদের জিহাদ করা ফরজ হয়ে গেছে। মিয়ানমারে যা চলছে তা কোনো বিবেকবান মানুষ সহ্য করতে পারে না।’

বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল শরণার্থী হিসেবে উল্লেখ করে হেফাজতের এ নেতা বলেন, ‘ভারত যদি আমাদের আশ্রয় না দিত তবে কোনো দিন দেশ স্বাধীন হতো না। অবিলম্বে বাংলাদেশের বর্ডার নির‌্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য খুলে দেয়া হোক।’

কারাগার বানলে টাকা দেবে হেফাজত

রোহিঙ্গাদের রাখতে প্রয়োজনে কারাগার বানানোর দাবি জানিয়ে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘জেলখানায় তাদের বন্দি করুন। তবুও সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক বাংলাদেশের। জেলখানা বানানোর টাকা প্রয়োজনে হেফাজতে ইসলামী বহন করবে।’ তাদের যার যা কিছু আছে সব রোহিঙ্গাদের লিখে দেয়া হবে বলেও জানান হেফাজতের এই নেতা।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরে আবার বায়তুল মোকারম উত্তর গেটে এসে শেষ হয়। এরপর মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই